খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলাতে ওয়ার্ড পর্যায়ে শুরু হয়েছে করোনার ভ্যাকসিন কার্যক্রম

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা করোনা ভাইরাস সংক্রামণ নিয়ন্ত্রণে সারাদেশের মতো ৯টি উপজেলাতে পরীক্ষামূলকভাবে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে। শনিবার(৭ই আগস্ট) সকাল থেকে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়ে চলে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। জেলার ৩৮টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভায় একযোগে এই কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে।

৯টি উপজেলা গুলো হলো-দীঘিনালা, পানছড়ি, মহালছড়ি, মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, রামগড়, মানিকছড়ি, লক্ষীছড়ি ও খাগড়াছড়ি সদর এবং পৌরসভা গুলো হলো রামগড়, মাটিরাঙ্গা ও খাগড়াছড়ি পৌরসভা।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি ইউনিয়নে ১টি ওয়ার্ডে ৬শত করে ২২হাজার ৮শত ও পৌর এলাকায় ৯টি কেন্দ্রে ৩টি করে বুথে ৬শত করে ১৬হাজার ২শত টিকা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সে হিসেবে ৩৯হাজার মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার প্রস্তুুতি রয়েছে। এদিকে টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে আগ্রহী মানুষের ভিড় ছিল লক্ষ্যনীয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা শহরের পৌর ৬নং ওয়াডের্র শালবন টেক্সটাইলি ভোকেশনাল স্কুলে টিকাদান কেন্দ্রে কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষ লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সবার হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র। যুবক থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষই এসেছেন টিকা নিতে। খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজসহ অধিকাংশ কেন্দ্রে টিকার পরিমাণ দুইশত তাই অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।

খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন ডা: নুপুর কান্তি দাশ বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রনে প্রদানকৃত টিকাদান কেন্দ্র গুলোতে গিয়ে আমি দেখেছি সাধারণ মানুষ ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টি-বাঁদল উপেক্ষা করে খুব শান্তিপূর্ণভাবে টিকা গ্রহন করছে। টিকাদান কর্মসূচির সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছে। স্বেচ্ছায় কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবক ভাই-বোনেরা। আইন শৃংখলা রক্ষায় কাজ করছে পুলিশ, আনসার সদস্যরা।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা:

উৎসবমুখর পরিবেশে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারাদেশের ন্যায় খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মাটিরাঙ্গা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৭টি কেন্দ্রের ২১টি বুথে ৪হাজার দুইশ জন মানুষকে টিকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মাটিরাঙা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: খায়রুল আলম। টিকা প্রদানকালে নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী, বয়োবৃদ্ধ ও দুর্গম প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে প্রাধান্য দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। টিকাদান কার্যক্রম সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত থেকে তদারকি করছেন। এছাড়াও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। টিকা কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যুব রেডক্রিসেন্ট ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: রফিকুল ইসলাম এবং মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহি অফিসার(অ.দা) হেদায়েত উল্যাহ্ বেশ কয়েকটি টিকা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এসময় তারা টিকাদান কেন্দ্রের সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহি অফিসার(অ.দা) হেদায়েত উল্যাহ্ জানান, টিকাদান কার্যক্রম সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে চলছে। টিকা নিতে আসা মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সকলকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরন করে টিকা নেয়ার আহবান জানান তিনি। টিকাদান কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে মো: হেদায়েত উল্যাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশের প্রতিটি নাগরিকের টিকা প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

মহালছড়ি উপজেলা:

খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে গণটিকার প্রথম দিনে টিকাকেন্দ্রে প্রচুর মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। সারাদেশের ন্যায় করোনা টিকা প্রয়োগের জন্য মহালছড়ি উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ১০টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। শনিবার(৭ই আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টায় টিকা গ্রহনকারীর নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। ইউনিয়ন ভিত্তিক টিকাদান কেন্দ্র সংখ্যা হলো-মহালছড়ি সদর ইউনিয়ন ২টি, মুবাছড়ি ইউনিয়নে ৩টি, মাইসছড়ি ইউনিয়নে ২টি, ক্যায়াংঘাট ইউনিয়নে ২টি ও সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নে ১টি।

মুবাছড়ি ইউনিয়নে টিকাদান কেন্দ্রে দায়িত্ব প্রাপ্ত ট্যাগ কর্মকর্তা মানবেন্দু চাকমা বলেন, মানুষ যথেষ্ট আগ্রহের সহিত টিকা নিতে প্রচুর মানুষ কেন্দ্রে এসেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ধনিষ্ঠা চাকমা বলেন, টিকাকেন্দ্রে টিকা গ্রহনকারীর উপস্থিতি মোটামুটি ভালো। তবে, একমাত্র ক্যায়াংঘাট ইউনিয়নটি দুর্গম এলাকা হওয়ায় লোকজন ঠিকমতো কেন্দ্রে আসতে না পারায় ৬’শ জনকে হয়তো টিকা প্রয়োগ সম্ভব হবেনা। তারপরও যতদুর সম্ভব ৬’শ জনকেই টিকা প্রয়োগ করার চেষ্টা করবো। অবশিষ্ট কেন্দ্রগুলো কোন সমস্যা নেই।

তিনি আরও বলেন, মহালছড়িতে প্রথম দিনে প্রতি ইউনিয়নে ৬’শ করে মোট ৫টি ইউনিয়নে ৩ হাজার জনকে টিকা প্রদান করার কথা রয়েছে। একটু কষ্ট হলেও ৩ হাজার মানুষকে টিকা প্রয়োগের চেষ্টা করবো।

মানিকছড়ি উপজেলা:

বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ গণটিকা কার্যক্রম শনিবার(৭ই আগস্ট) থেকে দেশব্যাপি শুরু হয়েছে। খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ পাঁচটি কেন্দ্রে একযোগে শুরু হওয়া গণটিকায় সকাল থেকে টিকা গৃহীতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদের ১,২,৩ নং ওয়ার্ড থেকে গড়ে ২শ জন ব্যক্তি প্রথম দিন টিকা নেওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। যদিও সকাল থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কেন্দ্রসহ ১নং ইউপির গচ্ছাবিলস্থ মানিকছড়ি ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্র, ২নং বাটনাতলী ইউপির বাটনাতলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, ৩নং যোগ্যাছোলা ইউপির পান্না কার্বারীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ও ৪নং তিনটহরী ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে নারী-পুরুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। সেখানে দায়িত্বরত ভ্যাকসিনেটর ও যুব রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবীরা আগত টিকা গ্রহীতাদের রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করে টিকা গ্রহনে সহযোগিতা করছেন। সকাল সাড়ে ৯টার পর মানিকছড়ি ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে উপজেলা চেয়ারম্যান মো: জয়নাল আবেদীন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) তামান্না মাহমুদ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রতন খীসা, মেডিক্যাল অফিসার ডা: মো: খায়রুল বাশার, ইউপি চেয়ারম্যান মো: শফিকুর রহমান ফারুক।

একই সময়ে সংশ্লিষ্ট ইউপিতে মো: শহীদুল ইসলাম মোহন, মো:আবুল কালাম আজাদ, ক্যয়জরী মহাজন উপস্থিত থেকে গণটিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করে দলীয় স্বেচ্ছাসেবক, গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার নিয়ে পুরো গণটিকাদান কার্যক্রম তদারকি করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রতন খীসা জানান, গণটিকার প্রথম দিনে সবকটি কেন্দ্রেই টিকা গ্রহীতারা সাগ্রহে এসে টিকা নিয়েছেন। ইউপির চার কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন ২হাজার ৪শ জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন ৩শ ৪২জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন টিকাদান কার্যক্রম চলমান থাকবে। টিকা গ্রহীতাকে অবশ্যই রেজিষ্ট্রেশন করে আসতে হবে।

উল্লেখ্য দেশের ৪হাজার ৬০০টি ইউনিয়ন, ১হাজার ৫৪টি পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৩৩টি ওয়ার্ডে একযোগে এ গণটিকা দান কর্মসূচি শুরু হয়। কাজ করছেন ৩২হাজার ৭০৬ জন টিকাদান কর্মী ও ৪৮হাজার ৪৫৯জন স্বেচ্ছাসেবী। টিকা নিতে প্রতিটি কেন্দ্রেই মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিটি কেন্দ্রেই মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরিস্থিতি সামলাতে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ রেডক্রিসেন্টের সদস্য।