খুলনার ডুমুরিয়ায় ক্রাইম পেট্রোল দেখে স্কুল ছাত্রকে হত্যা শ্বাসরোধ করে : আটক-৫

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া এসিজিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র নিরব মন্ডল (১২)কে হত্যা করা হয়েছে শ্বাসরোধ করে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে স্কুলের একটি কক্ষ থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।

গুটুদিয়া গ্রামের শেখর মন্ডলের ছেলে নিরব। স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের ন্যায় বৃহস্পতিবার বাড়ির পাশে স্কুলে যায় নিরব। নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি না ফেরায় তাকে খোঁজাখুঁজি করে তার পরিবারের লোকজন। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিরবের বাবা শেখরের কাছে মোবাইল ফোন করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ঘটনাটি থানা পুলিশকে জানান শেখর মন্ডল। খবর পেয়ে পুলিশ নিরবকে উদ্ধার করতে তৎপরতা শুরু করে। এক পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাত ১টার দিকে গুটুদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত কক্ষ থেকে নিরব এর লাশ উদ্ধার করে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ওই স্কুলের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী গুটুদিয়া গ্রামের মৃত সৈয়েদ আলী ওরফে শহিদুল মোল্যার ছেলে সোহেল মোল্যা (১৫), জেলেরডাঙ্গা গ্রামের পংকজ মন্ডলের ছেলে পিতু মন্ডল (১৫), গুটুদিয়া গ্রামের প্রকাশ রায়ের ছেলে হিরক রায় (১৫), ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ওই এলাকার ক্ষিতিশ রায়ের ছেলে দ্বীপ রায় (১২), ১০ম শ্রেণির ছাত্র উপজেলার তেলিগাতি গ্রামের অনিমেশ কবিরাজের ছেলে পিয়াল মন্ডল (১৬)কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আটক করা হয়।

আটককৃতরা ‘ক্রাইম পেট্রোল’ নামে একটি মুভি দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে মোটা অংকের অর্থ প্রাপ্তির আশায় এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

ডুমুরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কনি মিয়া বলেন, নীরব ম-ল গুটুদিয়া এসিজিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। স্কুল ছুটির পর পিয়াল নামের একটি ছেলে নীরবকে ডেকে নিয়ে যায়। স্কুলের পেছনে পরিত্যক্ত একটি ভবনে মধ্যে অবস্থান করছিল মিতু, সোহেল এবং দ্বীপ। নীরবকে নেওয়ার সাথে সাথে তার পা ধরে রাখে এবং মুখ বন্ধ করতে চায়। এছাড়া রশি ঝুলিয়ে রেখেছিল দ্বীপ। আটকদের ভাষ্য অনুযায়ী তাদের পরিকল্পনা ছিল অজ্ঞান করে তার বাবার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার। কিন্তু তারা প্রথমেই তাকে ঝুলিয়ে মেরে ফেলে। ২/৩ জন রশি টেনে ধরে রাখে, নিরব সাথে সাথে মারা যায়।

তিনি আরও বলেন, সেখানে নিরবের লাশ রেখে তারা তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়। হীরকের দায়িত্ব ছিল নিরবের বাবার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করার। ওই নাম্বারে ফোন দিয়ে নিরবের বাবার কাছে ৩০লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বিষয়টি জানার পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আমরা বিভিন্ন স্থান থেকে ৫জনকে আটক করি। লাশ উদ্ধারের আগে প্রথমে সোহেলকে আটক করি। পরে দ্বীপ, পিয়াল ও মিতুকে আটক করা হয়। আর লাশ উদ্ধারের পর হীরককে আটক করা হয়।

পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রাত ১১টার পর বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে যাই। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন। সেখানে যে আটককৃতদের দেখানো মতে ভবনের একটি কক্ষে লাশটি নোংরা কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। নিরবের কাঁধে স্কুল ব্যাগ ছিল। তখন আমরা লাশটি উদ্ধার করি। এ সময় আমরা দিয়ে নীরবকে মারা হয় এবং যে ফোন ও সীম দিয়ে কল করা হয়েছিল, সেগুলো উদ্ধার করি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল।

ওসি বলেন, তারা ক্রাইম পেট্রোলের একটি পর্ব দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। সেই প্লান অনুযায়ী কার কি ভূমিকা থাকবে, সেই অনুযায়ী তারা ভূমিকা নিয়েছে। তারা এই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তারা ক্রাইম পেট্রোল দেখেই মুক্তিপণ ৩০ লাখ টাকা দাবি এবং আগে পরে কি করবে সেই অনুযায়ী কাজ করেছে।

তিনি বলেন, সমাজিকভাবে কিশোর অপরাধের প্রবণতা বেড়েছে। তারই একটা অংশ হিসেবে ছেলেগুলো এতো সহজেই এ ধরনের কঠিন একটি অপরাধ করতে সাহস পেয়েছে। তারা জানিয়েছে টাকার জন্যই নিরবকে অপহরণ করা হয়। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগে তাকে রশি দিয়ে উচিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলা হয়।

এ ঘটনায় মামলা দায়ের এবং আটক ৫জনকে প্রস্তুতি চলছে আদালতে পাঠানোর। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।