গাইবান্ধার ১০ হাজার শ্রমিক যাবে দেশের বিভিন্ন জেলার ধান কাটতে

বছরের একটি মাত্র ফসল বোরো ধানের ওপর নির্ভর করে হাওর অধ্যুষিত এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ হয়। এপ্রিলের প্রথম দিকেই বিভিন্ন হাওরে আগাম জাতের ধান পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাব ও লকডাউনে শ্রমিক সংকটে পড়েছেন চাষিরা। বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে হাওর অঞ্চলে আগাম ধান কাটা শুরু হয় ।আর ঐসব এলাকার নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করায় গতবারের মতো এবারো লকডাউন হওয়ায় তারা নিজেদের এলাকায় আসতে পারছে না ।এতে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। অন্যদিকে চলতি বোরো মৌসুমে গাইবান্ধা জেলার কৃষকদের এখনো ধান পাকেনি। এরই মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে এখানকার শ্রমজীবি মানুষরা। সেই সঙ্গে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, নাটোর, নওগাঁ ও বগুড়াসহ বিভিন্ন হাওরাঞ্চলে ধান কাটতে শ্রমিকের অভাব দেখা দিয়েছে। তাই উভয় জেলার সমস্যা সমাধানে গাইবান্ধা থেকে কৃষি শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে হাওরাঞ্চল গুলোতে। ইতোমধ্যে গাাবান্ধা জেলা প্রশাসন ও বেসরকারি সংস্থা জিইউকে’র সহযোগিতায় ৫০০ শ্রমিক গেছেন ধান কাটতে। পর্যায়ক্রমে গাইবান্ধা জেলা থেকে আরো সাড়ে ৯ হাজার শ্রমিক পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয় ধান কাটা শ্রমিক সঙ্কট নিরসনে হাওর অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শ্রমিক পাঠানো হবে । জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যৌথভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

জানা যায়, প্রতিবছর এই মৌসুমে পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্ন জোগাতে গাইবান্ধা জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিল ও হাওর এলাকায় ধান কাটতে যায় কৃষকরা। পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় করোনায় বসে না থেকে এবারো তারা যাচ্ছে ধান কাটতে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কৃষি শ্রমিক হাসান আলী জানান প্রতিবছর আমরা ধান কাটার জন্য বগুড়ার নন্দীগ্রাম থানার রনবাঘা গ্রামে যাই। জমির মালিক জাহিদুল আমাদেরকে কল করে নিয়ে যায়। আমরা প্রায় ৪০জন কৃষক ধান কাটার উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। জনপ্রতি আমরা প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে পারিশ্রমিক নেই। গতবছরও নিয়েছি। আশাকরি এবারো তাই পাবো।করোনা সম্পর্কে কথা বললে তিনি জানান, আমাদের চরে বিদ্যুৎ নাই। টিভি নাই। তাই আমরা জানিনা করোনায় প্রশাসন এত নিয়ম করেছে। গৃহস্ত আমাদের ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছিলো। পথিমধ্যে পুলিশ আমাদের বাধা দেয় এবং পরে বাসযোগে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, ধান কাটার মোৗসুম শুরু হয়েছে। এ সময় অনেক ধান কাটা শ্রমিক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধান কাটতে যায়। নওগাঁ, বগুড়া, মৌলভিবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে। গত বছরও করনার সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদেরকে আমরা বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়েছি। গতবারের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদেরকে মাস্ক দিয়ে বাসের মাধ্যমে ধান কাটা এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে এটি অব্যাহত থাকবে।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মাসুদুর রহমান জানান, হাওরাঞ্চল গুলোতে ১০ হাজার শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যা ধীরে ধীরে পাঠানো হবে।