চিরকালের জামিন নিয়ে কারাবন্দি সাতক্ষীরায় বিএনপি নেতা সাবু’র মৃত্যু ।। দাফন সম্পন্ন

ইহজগতে জামিন না পেলেও চিরজীবনের জন্য জামিন নিয়ে পরকালে চলে গেলেন তিনি।
কারাবন্দি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মাহফুজুর রহমান সাবু’র (৫৮) দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

সোমবার (১৪ জুন) সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে অন্তরীণ অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত ৯টার দিকে খুলনা ২৫০বেড হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন (ইন্না..রাজিউন)।

মাহফুজুর রহমান সাবু কলারোয়া পৌরসভাধীন ঝিকরা গ্রামের মৃত লুৎফর রহমানের পুত্র।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২পুত্র, ভাই-বোনসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

মঙ্গলবার (১৫ জুন) আছরের নামাজের পর পৌরসভাধীন ঝিকরা জামে মসজিদ চত্বরে জানাজা শেষে মরহুমকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জানাজা নামাজ পরিচালনা করেন ওই মসজিদের ইমাম মাওলানা মাহবুবুর রহমান।

এর আগে আবেগাপ্লুত হয়ে প্রয়াতের বড় ভাই কলারোয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মাগফুর রহমান রাজু তার ছোট ভাইয়ের জন্য সকলের কাছে ক্ষমা ও দোয়া কামনা করে সংক্ষিপ্ত কথা বলেন।

জানাজায় বিএনপি ও অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার অসংখ্য মুসল্লি অশ নেন।

প্রয়াতের দুই পুত্র সজল ও সৈকত জানান, ‘তাদের পিতা সোমবার বিকেলে সাতক্ষীরা কারা অভ্যন্তরের বাথরুমে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। দীর্ঘ সময় তার জ্ঞান ফেরেনি। পরে জেলখানার তত্ত্বাবধানে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খুলনা ২৫০ বেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারকে জানানো হলে তারাও (দুই পুত্র) সেখানে যান।’

তারা আরো জানান, ‘তাদের পিতার দীর্ঘদিন উচ্চ ডায়াবেটিস ছিলো। কারাগারে যাওয়ার আগেই একাধিকবার স্ট্রোক হয়। দুই চোখেই দেখতে পেতেন না। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারতেন না। কারাগারেও অন্যের সহায়তায় চলাফেরা করতে হতো। অসুস্থতার কারণে চেষ্টা করেও আদালতে তার জামিন না হলেও ইহকালে চিরতরে জামিন নিয়ে চলে গেলেন পরকালে।’

প্রয়াতের বড় ভাই সাবেক পৌর কাউন্সিলর মাগফুর রহমান রাজু জানান, ‘আইনগত বিধি সম্পন্ন করে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে খুলনা হাসপাতাল থেকে লাশ হাতে পেয়ে দুপুরের দিকে বাড়িতে আনা হয়। আছরের নামাজের পর জানাজার অনুষ্ঠিত হয়।’

তিনি আক্ষেপ করে ও আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘যে কারণে জেলে থেকে লাশ হয়ে আসতে হলো, সেই ঘটনায় সে জড়িত ছিলেন না। পদে থাকায় অন্যায় ভাবে তাকে জড়ানো হয়েছে। যাদের কারণে এমনটি হলো তাদের আল্লাহ্ বিচার করবেন।’

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহর হামলা মামলায় চলতি বছরে আদালতের রায়ে প্রায় ৪বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে গত ২৭ মার্চ থেকে সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন মাহফুজুর রহমান সাবু। তিনি ওই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি না হলেও চার্জশিটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। একই মামলায় একই সাথে কারাগারে আছেন তার ছোট ভাই উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব তাওফিকুর রহমান সনজু।

মাহফুজুর রহমান সাবু কলারোয়া পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি, পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ন সম্পাদক ছিলেন।

তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী এএফএম মহিতুল ইসলামের ভাগ্নে (বোনের ছেলে)।

পাইলট হাইস্কুল মোড়ের সাবু মার্কেট নামে পরিচিত এমআর সুপার মার্কেটের স্বত্বাধিকারী ছিলেন তিনি।

কারাগারে যাওয়ার আগে জীবদ্দশায় অসুস্থতা জনিত কারণে প্রায় অন্ধ হয়ে পড়ায় তিনি দু’চোখে না দেখলেও পরিচিত সকলের কন্ঠস্বর শুনেই নাম ধরে ডেকে কথা বলতেন।

এদিকে, তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। একই সাথে তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।