ট্রাম্প গ্রেপ্তার হলে যা যা ঘটবে : বিবিসি

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে পুলিশ। ২০১৬ সালে স্টোর্মি ড্যানিয়েলস নামের এক পর্ন তারকাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেয়া ইস্যুতে যে তদন্ত চলছিল, তার ভিত্তিতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এটি হলে ট্রাম্পই হবেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যাকে ক্রিমিনাল চার্জের মুখোমুখি হতে হবে।

বিবিসি জানিয়েছে, ২০১৬ সালে পর্ন তারকা স্টোর্মি ড্যানিয়েলস গণমাধ্যমকে জানান যে ২০০৬ সালে তার সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক ছিল। এসময় ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন চুপ থাকার জন্য ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার প্রদান করেন। এই প্রক্রিয়াটি বৈধ নয়। এরপর যখন এই অর্থ প্রদান সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সেখানে বলা হয়, এটি ছিল আইনি খরচ পরিচালনা বাবদ পাঠানো অর্থ। কিন্তু প্রসিকিউটররা বলছেন, ট্রাম্প তার বিজনেস রেকর্ড নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। নিউইয়র্কে এটিও একটি অপরাধ।

এছাড়া প্রসিকিউটররা মনে করছেন, ট্রাম্প হয়ত নির্বাচনী আইনও লঙ্ঘন করেছেন। কারণ, তিনি ড্যানিয়েলসকে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে তার ভোটারদের নিজের ‘কেলেঙ্কারি’ সম্পর্কে জানতে দেননি। রেকর্ড জালিয়াতির মাধ্যমে অপরাধ ঢেকে রাখা আরও গুরুতর অপরাধ।

নিউইয়র্ক সিটি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির এক সাবেক প্রসিকিউটর ক্যাথেরিন ক্রিস্টিয়ান বলেন, ট্রাম্পের জন্য এই মামলা কঠিন হতে চলেছে। তবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আসলেই শেষ পর্যন্ত মামলা হবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। এটি নির্ভর করছে নিউইয়র্ক সিটি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্রাগের ওপরে। তিনিই এই ইস্যুতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনিই নির্ধারণ করবেন যে এ জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে কিনা।

গত সপ্তাহে ট্রাম্পের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে গ্রান্ড জুরির সামনে হাজির হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে, এই তদন্ত এখন শেষ হওয়ার পথে। তার আইনজীবীরা বলছেন, শুধুমাত্র গণমাধ্যমের খবর শুনেই ট্রাম্প ধারণা করেছেন যে মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তবে তদন্ত শেষ হওয়ার আরও নিদর্শন পাওয়া গেছে। মাইকেল কোহেন এবং তার সাবেক আইনি উপদেষ্টা রবার্ট কস্তেলো সম্প্রতি তাদের জবানবন্দি দিয়েছেন।
কীভাবে গ্রেপ্তার হবেন ট্রাম্প?

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যদি শেষ পর্যন্ত অভিযোগ তৈরি করা হয় তাহলে তাকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই গ্রেপ্তার করা হবে বলে মনে করছেন তার আইনজীবীরা। তবে ট্রাম্পকে গ্রেপ্তার একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হতে যাচ্ছে। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে প্রশাসনকে। এই বিচারকার্য গণমাধ্যমের সামনে উন্মুক্ত থাকবে। তবে আদালত চাইলে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। ট্রাম্পের প্রাইভেসি কিংবা নিরাপত্তার কথা তুলে তাকে গোপনে আদালতে আনা হতে পারে।

এক কর্মকর্তা মার্কিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আমেরিকার সিক্রেট সার্ভিসসহ বেশ কয়েকটি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এই গ্রেপ্তারের সঙ্গে যুক্ত হবে। ধারণা করা হচ্ছে, অপরাধ প্রমাণিত হলে ট্রাম্পকে ৪ বছরের জন্য কারাগারে যেতে হবে। যদিও কিছু আইন বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, হয়ত বড় জরিমানা দিয়েও ছাড় পেতে পারেন ট্রাম্প। সেক্ষেত্রে তাকে আর কারাগারে যেতে হবে না। তবে এখনও তার শাস্তির বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।

গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কি যুক্তরাষ্ট্রে আন্দোলন হবে?
এদিকে নিজের গ্রেপ্তারের ইঙ্গিত দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা আর এভাবে চলতে দিতে পারি না। তারা আমাদের জাতিকে ধ্বংস করছে আর আমরা শুধু বসে বসে দেখছি। ২০২১ সালে মার্কিন ক্যাপিটলে হামলার সময়ও এভাবেই সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ফলে তাকে গ্রেপ্তার করা হলে আবারও সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশজুড়ে বড় ধরণের আন্দোলনও শুরু হতে পারে।
যদিও নিউ ইয়র্ক পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন ব্রাগ। তিনি এক চিঠিতে পুলিশকে বলেন, আমরা কোনোভাবে আমাদের অফিসার এবং নিউইয়র্কের আইনের শাসনকে হুমকির মুখে পড়তে দেব না। আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যে কোনো ধরণের হুমকি প্রতিরোধে কাজ করবে এবং শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। যদিও এখন পর্যন্ত এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে পারবেন ট্রাম্প?
গ্রেপ্তার কিংবা অপরাধ প্রমাণিত হলেও ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে পারবেন। ট্রাম্প এরইমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যত বাধাই আসুক না কেনো তিনি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেনই। মার্কিন আইনে এমন কোনো ধারা নেই যা দিয়ে একজন অপরাধিকে নির্বাচনে লড়া থেকে বিরত রাখতে পারে। এমনকি জেলে থেকেও নির্বাচনে লড়া সম্ভব। যদিও বিবিসি বলছে, গ্রেপ্তার হলে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা প্রভাবিত হবে। তিনি হয়ত তার নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে মনোযোগ হারিয়ে ফেলবেন। বিতর্কগুলোতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা সহজ হবে।