ঢাকা বিভাগে অনির্দিষ্টকালের পণ্য পরিবহন ধর্মঘট চলছে

সড়ক পরিবহন আইনের সংশোধনসহ সাত দফা দাবি আদায়ে ঢাকা বিভাগে অনির্দিষ্টকালের পণ্য পরিবহন ধর্মঘট চলছে।

রোববার সকাল থেকে এ পণ্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়।

শনিবার রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালে এ পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় ‘পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’।

মহাসমাবেশে নেতারা বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তায় পণ্যবাহী গাড়ি চলবে না। আর দাবি মেনে নেয়া হলে আগামীতে যে কোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করা হবে।

অন্যদিকে ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সমাবেশে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। সংসদের আগামী অধিবেশনে সড়ক আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনের দাবি জানানো হয়।

দাবি আদায়ে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এরই অংশ হিসেবে তেজগাঁও টার্মিনালে মহাসমাবেশ করে সংগঠনটি। এতে দেশের বিভিন্ন জেলার পরিবহন নেতারা বক্তব্য রাখেন।

ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মুকবুল আহমদ বলেন, মৃত্যুপরোয়ানা মাথায় নিয়ে শ্রমিকরা রাস্তায় পণ্যবাহী গাড়ি চালাবে না। কোনো শ্রমিক ইচ্ছা করে রাস্তায় মানুষ মারে না। অনেক কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হতে পারে। এ জন্য শুধু শ্রমিককে ফাঁসি বা জেল দেয়ার বিধান মানা হবে না। তিনি বলেন, সাত দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পণ্যবাহী গাড়ি চলবে না।

ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. তাজুল ইসলাম বলেন, পথে পথে শ্রমিকদের পুলিশ হয়রানি করে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে জীবনবাজি রেখে মালিকরা গাড়ি নামিয়েছেন, শ্রমিকরা গাড়ি চালিয়েছেন। কিন্তু সড়ক আইনে শ্রমিকদের ফাঁসি দেয়ার কথা বলা হচ্ছে।

এটি কখনও হতে পারে না। সরকারকে সাত দফা দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দাবি মানা হলে আগামীতে রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা রাস্তায় থাকবেন।

বগুড়া আন্তঃজেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মান্নান মণ্ডল, নওগাঁ জেলা ট্রাক ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শফিকুলসহ বিভিন্ন জেলার নেতারা ধর্মঘট চলাকালে ঢাকায় পণ্যবাহী গাড়ি চালাবেন না বলে ঘোষণা দেন। এতে বক্তব্য দেন- ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক তালুকদার মো. মনির, সামছুল আলম, মো. বালা মিয়া প্রমুখ।

দাবির মধ্যে রয়েছে- সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন করা; সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০২ ধারায় মামলা গ্রহণ না করা; ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল ও জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করা; টাঙ্গাইল জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সদস্য হাসমত আলীসহ মালিক ও শ্রমিক মুক্তি; পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা; গাড়ির কাগজপত্র চেকিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা; পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাসংবলিত ট্রাক টার্মিনাল বা স্ট্যান্ড নির্মাণ করা; গাড়ির মডেল বাতিল করতে হলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া; সহজ শর্তে ভারী যানবাহন চালককে ভারী লাইসেন্স দেয়া ও এর আগপর্যন্ত হালকা বা মধ্যম লাইসেন্স দিয়ে ভারী যানবাহন চালানোর সুযোগ দেয়া; সারা দেশে গাড়ির ওভারলোডিং বন্ধ করা এবং ফুটপাত, ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস ও জেব্রাক্রসিং ব্যবহার নিশ্চিত করা।

ইলিয়াস কাঞ্চনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা সড়ক আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে রাজধানীর ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে সমাবেশ করেছে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। ১২ অক্টোবরের মধ্যে এসব দাবি মানা না হলে শ্রমিক ফেডারেশন পরিবহন ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবে বলে বক্তারা জানান।

শ্রমিকদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করায় সমাবেশে চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস নির্ধারণ নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, এক সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রামের অনেক শিশু মারা গেছে, এক সড়ক দুর্ঘটনায় মিশুক-মনিরসহ কয়েকজন মারা গেছে, আরেক সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন সচিব মারা গেছেন। অথচ কেন ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস নির্ধারণ করা হল? সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিকের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করায় ইলিয়াস কাঞ্চনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন বক্তারা।

সমাবেশে প্রধান অতিথি ওসমান আলী বলেন, সড়ক আইনের দুর্ঘটনায় চালককে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার, দুর্ঘটনায় ৫ বছর জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং ওয়েস্কেলে তিন বছর জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধান আমরা মানি না- মানব না। ১২ অক্টোবরের মধ্যে সড়ক আইন সংশোধন করে জামিনযোগ্য ও জরিমানা ৫০ হাজার টাকা করতে হবে।

কথায় কথায় পুলিশের অহেতুক মামলা দেয়া বন্ধ করতে হবে। এর মধ্যে এসব দাবি মেনে নেয়া না হলে শ্রমিক ফেডারেশন বৈঠক করে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। আবুল কালাম বলেন, সড়ক পরিবহন আইনের ৮৪, ৯৮, ১০৫ ও ১১৭ ধারায় সংশোধনী আনতে হবে।

সড়ক নিরাপদ না করে শুধু চালককে দণ্ড দেয়া বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি সাদেকুর রহমান হিরুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম, শ্রমিক ফেডারেশনের করিম বকস দুদু, করম আলী প্রমুখ।