তিতলির প্রভাবে কক্সবাজারে বাড়িঘর বিলীন, ফসল প্লাবিত

ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ, কুতুবদিয়া ও চকরিয়ায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। এতে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। জোয়ারের পানির ধাক্কায় বিলীন হয়ে গেছে বেশ কিছু ঘরবাড়ি। হুমকিতে রয়েছে আরও অসংখ্য পরিবার। অপরদিকে কুতুবদিয়ায় আমন ফসল ও আগাম শীতকালীন সবজির বীজতলাসহ প্রায় ৮০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় তিতলি ভারতের উড়িষ্যা ও রুন্দ্র এলাকা অতিক্রমের সময় কক্সবাজারের উপকূল আক্রান্ত হয়নি। কিন্তু দিনের জোয়ারে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গিয়ে টেকনাফে বঙ্গোপসাগরের ভাঙনে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণ ও মাঝেরপাড়া জালিয়ার ঘের সংলগ্ন অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যায়। এ ছাড়া ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে ইউনিয়নের ঘোলাপাড়া, পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণপাড়া, মাঝরপাড়া ও জালিয়াপাড়ার একাংশ। খবর পেয়ে এলাকায় পরিদর্শনে যান উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান ও সহকারী কমিশনার ভূমি প্রণয় চাকমা।

শাহপরীর দ্বীপ মাঝরপাড়ার হোছাইন আহমদ বলেন, জোয়ারে বৃদ্ধি পাওয়া পানির আঘাতে তার বসতবাড়ি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। অকস্মিক এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। এখন খোলা আকাশের নিচে স্থান নেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

দক্ষিণপাড়ার মিজানুর রহমান বলেন, সাগরে জোয়ারের প্রভাবে মাঝরপাড়া এলাকার একটি বড় মসজিদ, আব্দু শুক্কুর, মো. ইউনুচ, মুক্তার আহাম্মদ, ইমান শরীফসহ অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি, দোকান বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া দক্ষিণপাড়া এলাকার বেচা আলীর পরিবারের ৩টি, আব্দুর রশিদের পরিবারের ছয়টি, আব্দুল মোনাফের চারটি, জাফর আহাম্মদের পরিবারের পাঁচটি, নজির আহাম্মদের পরিবারের তিনটি, দুদু মিয়ার পরিবারের দুটি, আব্দুর রহমানের পরিবারের তিনটি, ছিদ্দিক আহাম্মদের পরিবারের দুটি, আলী আহাম্মদের পরিবারের দুটি, মুক্তার আহাম্মদ, লায়লা খাতুন, মাঝের পাড়া এলাকার আব্দুল গনি মিস্ত্রির চারটি, তাজর মুল্লুকের পরিবারের চারটিসহ অসংখ্য বসতঘর সাগরে তলিয়ে গেছে।

স্থানীয়রা বলেন, বিলীন আতঙ্কে রয়েছে দক্ষিণপাড়া এলাকার নজির আহাম্মদের তিনটি, এনায়েত উল্লাহ, এনায়েত উল্লাহ, ছলিম উল্লাহ, মো. শরীফ, রফিক আলম, শামসুল হক, আব্দুল মজিদ, নূর মোহাম্মদ, ফাতেমা খাতুন, হাবিবুর রহমান আব্দুল মালেক আব্দুল হাকিম, মাঝরপাড়া এলাকার আব্দুল হক, ইমান শরীফ, মো. শফিকেরসহ শতাধিক বসতবাড়ি রয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আমিন বলেন, সাগরে বাড়িঘর বিলীন হওয়ায় এলাকার মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। আমার পৈত্রিক বসতবাড়িও সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। দ্বীপের ভাঙনে পড়া পরিবারগুলো বর্তমানে টেকনাফ, উখিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।

তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, শাহপরীর দ্বীপ রক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১০৬ কোটি টাকার বেড়ি বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। এর মধ্যে জোয়ারের প্রভাবে এলাকার কিছু বসতঘর সাগরে বিলীন হয়েছে বলে শুনেছি। বর্ষার পরে বেড়ি বাঁধ সংস্কার কাজ পুরোদমে চলবে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান বলেন, শাহপরীর দ্বীপের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে।

অপরদিকে তিতলির প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে কুতুবদিয়া দ্বীপের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আমন ফসল ও আগাম শীতকালীন সবজির বীজতলাসহ প্রায় ৮০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেছেন উপজেলা কৃষি অফিস।

কুতুবদিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আশিক জামিল মাহমুদ বলেন, বৃহস্পতিবার দিনের জোয়ারে উপকূলের নিম্নাঞ্চল সাগরের নোনা জলে প্লাবিত হয়। উপজেলার ছয় ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে জোয়ারের পানিতে ৫০ হেক্টর জমির আমন ফসল নোনা জলে প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ২৫০ হেক্টর জমির শীতকালীন শাকসবজি ৩০ হেক্টর জমির বীজতলা। এতে প্রান্তিক কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে।

কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনোয়ারা বেগম বলেন, কুতুবদিয়া উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধের ২১ কিলোমিটার ভাঙা রয়েছে। ফলে তিতলির প্রভাবে বাড়ন্ত জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে ফসলি জমি ও শীতকালীন সবজির বীজতলা প্লাবিত হয়েছে। এতে কৃষকদের চরম ক্ষতি হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ড. মো. রইস উদ্দিন মুকুল বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ অতিক্রমকালে উপকূলের কোথাও ক্ষতি হয়নি। তবে পূর্ণিমার তিথি ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়ায় কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পাঠাতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের সহযোগিতার ব্যবস্থাও করবে প্রশাসন।