তিন বৈঠকেও ব্যর্থ পাকিস্তানের দুই ‘মহানায়কের’ দল

চাওয়া-পাওয়ার খাতায় হিসাব মেলাতে পারছে না পাকিস্তানের নতুন সরকার গঠনের দুই ‘মহানায়কের’। পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।

৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ১০ দিন পরও সরকার গঠনের চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনো সামনে আসছে না। নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোট সরকারের পথে হাঁটছে দেশটি। সেখানেই পদে পদে বাধা পড়ছেন ভোটের ঝুড়িতে এগিয়ে থাকা প্রধান দুই দলের দুই শিরোমণি-নওয়াজ শরিফ (পিএমএল-এন) ও বিলাওয়াল ভুট্টো (পিপিপি)।

দফায় দফায় আলোচনা হচ্ছে। বারবার মত বদলাচ্ছে। সমানতালে চলছে দর কষাকষি। তবু হিসাব মিলছে না। দিন শেষে দেওয়া-নেওয়ার খাতায় শূন্য। খবর জিইও নিউজ ও ডনের।

গত এক সপ্তাহে পরপর তিনবার বৈঠক করেও সমোঝতায় আসতে পারেননি তারা। প্রথম বৈঠকে বিলাওয়াল ভুট্টোকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর শর্তে জোট সরকারে যাওয়ার আলোচনা হয়। আড়াই বছর, আড়াই বছর করে।

এর পরপরই আবার আরেকটি শর্ত ওঠে-সরকার হবে তিন বছর, দুই বছর ফর্মুলায়। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী ভাগাভাগি। প্রথম ৩ বছরে থাকবে পিএমএল-এন। প্রধানমন্ত্রী হবেন নওয়াজ। পরের দুই বছরে থাকবে পিপিপি। প্রধানমন্ত্রী থাকবেন বিলাওয়াল ভুট্টো। কিন্তু এই বৈঠকের সিদ্ধান্তও স্থায়ী হয়নি।

এরপর পিপিপির মন পরিবর্তনের জন্য জোরালোভাবে চেষ্টা করেছে পিএমএল-এন। তদের জাতীয় পরিষদের স্পিকার এবং সিনেট চেয়ারম্যানের পদ চাওয়ার প্রস্তাব করেছিল দলটি। কিন্তু সুর পালটে পিএলএম-এনকে সরকার গঠনে অন্য শর্ত জুড়ে দেয় পিপিপি।

বিলাওয়ালের বাবা আসিফ আলি জারদারির প্রেসিডেন্সি দাবি করে দলটি। শেষ পর্যন্ত চতুর্থবারের মতো আজ সোমবার আবারও আলোচনায় বসবে পিএমএল-এন এবং পিপিপি।

এর আগে দুদলের মধ্যকার তৃতীয় বৈঠকটি নিষ্পত্তিহীন থেকে যায়। তবে বৈঠকের পরে পিএমএল-এনের এক সংক্ষিপ্ত ঘোষণায় বলা হয়, উভয় পক্ষের সেই আলোচনায় ‘উলে­খযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে।

বৈঠকে পিএমএল-এন’র প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন ইসহাক দার, সর্দার আয়াজ সাদিক, আজম নাজির তারার এবং মালিক মুহাম্মদ আহমেদ খান। অন্যদিকে পিপিপি প্রতিনিধিত্বকারীরা ছিলেন সিন্ধুর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ, সাঈদ গনি, কামার জামান কাইরা, নাদিম আফজাল চান এবং নবাব সানাউল্লাহ জেহরি।

এরই মধ্যে পিএমএল-এন নেতা মালিক আহমেদ খান অভিযোগ করেছেন-পিটিআই জনসাধারণকে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উসকানি দিচ্ছে। এমনকি দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়কদের আহ্বান জানিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি তত্ত্বাবধায়কদের অনুরোধ করছি যে, পরিস্থিতি যেভাবে বিকশিত হয়েছে, যদি আপনি আগে থেকে ব্যবস্থা না নেন তবে এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।’

অন্যদিকে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) পরবর্তী ফেডারেল সরকার গঠনের বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে সিন্ধুর গভর্নর কামরান তেসোরি এবং দলের সিনিয়র ডেপুটি আহ্বায়ক মোস্তফা কামাল ও ফারুক সাত্তার রয়েছেন।

এ বিষয়ে পিএমএল-এন তথ্য সচিব মরিয়ম আওরঙ্গজেব জানিয়েছেন, একটি বৈঠকে পিএমএল-এন সুপ্রিমো নওয়াজ শরিফ এবং এমকিউএম নেতৃত্বের মধ্যে একটি নীতিগত চুক্তি হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘তারা দেশ ও জাতির স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন।’ পিএমএল-এন সভাপতি শাহবাজ শরিফের আমন্ত্রণে এমকিউএম-পি প্রতিনিধি দল লাহোরের জাতীয় ওমরায় নওয়াজের বাসভবনে গিয়েছিলেন।