ধেয়ে আসছে ডেঙ্গু জ্বর!

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, ২০১২ সালে বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৫০-১০০ মিলিয়ন। মুলত, মশাবাহিত ভাইরাল রোগের মাঝে ডেঙ্গু অন্যতম। যা মূলত গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলেই বেশি হয়। এডিস নামক মশা দিয়ে এর বিস্তার। যার মূলত চারটি সেরোটাইপ রয়েছে (ডিইএনভি-১, ২, ৩ ও ৪)। সাধারণত একবার এক সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হলে পরবর্তী সময়ে আরেকটি দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

এই কারণে রোগের লক্ষণ সুনির্দিষ্ট করে ধরাটা অনেক ক্ষেত্রেই মুশকিল হয়ে পড়ে। কারও হয় জ্বর, কারও মাথায় তীব্র ব্যথা, সঙ্গে গায়ে ব্যথাও থাকে। আবার কারও কিছু বোঝার আগেই রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রক্তক্ষরণ হয়ে অবধারিত মৃত্যুর যাত্রীও হতে পারেন।

কেন এমনটা হচ্ছে? সরকারের আন্তরিকতার অভাব আছে, তা বলা যাবে না। গবেষণা চলছে নিয়মিত। সমস্যা, আমাদের দেশে পূর্বে হতো সেরোটাইপ-১ ও ২ দিয়ে আর এখন হচ্ছে সেরোটাইপ-৩ দিয়ে। গেল বছর থেকে আশঙ্কাজনক হারে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। অনেকটা স্বাভাবিক ভাইরাল জ্বরের মতো হওয়াতেই এই বিপত্তি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, ২০১২ সালে বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৫০-১০০ মিলিয়ন। ১৯৭০ সালের আগে শুধু ৯টি দেশে ডেঙ্গু পাওয়া গিয়েছিল। আজ বিশ্বের ৫০ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গু ঝুঁকিতে। যার মধ্যে ৭০ শতাংশ এশীয় রয়েছেন। এর কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তন। আমরা জানি কোথাও পানি জমে থাকলে তাতে ডেঙ্গু মশা ডিম পাড়ে। সেখান থেকেই শুরু হয় প্রাদুর্ভাব।

গেলো বছর এবং চলতি বছর বৃষ্টির পরিমাণ বলতে গেলে খুবই কম। তাও ডেঙ্গু এখন মহামারি। এর কারণ বৃষ্টির পরিমাণের তফাৎ। সাধারণত বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকলে সেই পানিতে মশার জীবনচক্র সহজেই বিস্তার লাভ করে।

অপরদিকে ভারি বৃষ্টি হলে ধুয়ে চলে যায় সব। কম বৃষ্টির সঙ্গে যদি যুক্ত হয় ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা, তবে মশার জীবনচক্র ছোট হয় এবং এটি দ্রুত প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা অর্জন করে।

যেটি ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে হলে সম্ভব নয়। এ কারণে বাসার ভেতরে কোথাও পানি জমে থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে ততটা ক্ষতিকর নয়। যতটা বাসার বাইরের বারান্দায় বা এমন স্থানে পানি জমে থাকলে যেমনটা হয়।

বিশ্বসংস্থাটির জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকারি প্যানেলের (আইপিসিসি) হিসাব করে দেখিয়েছে, বিশ্বজুড়ে যে উষ্ণতা বাড়ছে, তাতে ২০৮০ সালের মধ্যে ১.৫-৩.৫ বিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে থাকবে। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ধরা পড়তে পড়তে যেহেতু অনেক সময় দেরি হয়ে যায়, আবার সারাক্ষণ মশা থেকে রক্ষা পাওয়ার কৌশল অবলম্বন করার চেষ্টা সাধারণ জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, তাই প্রতিরোধের দিকেই নজর দেয়া উচিত।

বনায়ন ছাড়া আবহাওয়ার পরিবর্তন সম্ভব নয়। নগরায়ণ দরকার তবে যত্রতত্র নয়। আজ ঢাকা ও চট্টগ্রামে ডেঙ্গু হচ্ছে কাল গ্রামে গ্রামে হবে। শহর এলাকায় নিয়মিত মশা নিধন কর্মসূচি চলে। আবার কিছু কিছু জায়গায় তা অনিয়মিত। এলাকার লোকজন সচেতনভাবে নর্দমা পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা করলে, আটকে থাকা পানির স্থানে বেশি করে পানিপ্রবাহ দেয়ার চেষ্টা করলে মশার জীবনচক্র ব্যাহত হবে।

ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে নজর দিতে হবে বারান্দার টবে বা অন্যকিছুতে যেন পানি আটকে/ জমে না থাকে। সচেতন না হলে শুধু চিকিৎসা নিয়ে এই রোগ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। সামনে ধেয়ে আসছে আরও বড় বিপদ।