নিকাব না খোলায় সাক্ষাৎকার নেয়নি শিক্ষক, প্রতিবাদে ফের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় নিকাব না খোলায় এক ছাত্রীর সাক্ষাৎকার না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে ফের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যায়ের উপ-উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা ন্যক্কারজনক ও হীন এই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, ক্যাম্পাসের সর্বত্র শালীন, রুচিসম্মত পোশাক পরিধানের অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্ব স্ব ধর্মপালনের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও পরবর্তীতে যেন কেউ কারো ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার মতো দুঃসাহস না করে, এটা নিশ্চিত করার দাবি তুলেন।

স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তি স্বাধীনতার নগ্ন হস্তক্ষেপ, ধর্ম পালনে বাধা প্রদান ও সম্পূর্ণ সংবিধান লংঘনের শামিল। প্রত্যেক ধর্ম ও আমাদের সংবিধান নারীকে পোশাকের স্বাধীনতা প্রদান করেছে। কিন্তু যখন একজন নারী তার ইচ্ছেমতো বোরকা, নিকাব ও হিজাব পরায় তার নিজ বিভাগের শিক্ষকগণ তার পোশাকের স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ করে ধর্ম পালনে বাধা দেয়া হয়, তখন এর মাধ্যমে সর্বত্র উগ্রবাদ ছড়িয়ে দেয়া হয়।

কিন্তু প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতার যুগে আমাদের চারপাশে এমন কি কোনো প্রযুক্তি নেই যার দ্বারা তার ধর্মীয় ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা দূর না করে একজন শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করা যায়? নারী শিক্ষার্থীর পোশাক নিয়ে শিক্ষকের এমন নগ্ন হস্তক্ষেপের জন্য আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ খুবই মর্মাহত এবং এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

পোশাকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা বাংলাদেশের সংবিধান ও সার্বজনীন মানবাধিকার লঙ্গন উল্লেখ করে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বলেন, ‘নেকাব না খোলার কারণে এক ছাত্রীকে ভাইবা বোর্ডে বসতে দেওয়া হয় নি। বিষয়টি লজ্জার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে এটি সাংঘর্ষিক এবং বাংলাদেশের সংবিধান এবং সার্বজনীন মানবাধিকার বিরোধী। আমরা শিক্ষাগুরুদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই কোন অধিকারে তাকে ভাইবায় বসতে দেওয়া হয় নি? ওই বিভাগে সরাসরি সংবিধান লঙ্ঘন করেছে সেইসাথে ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করেছে। আমারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা দাবি জানাই এরকম পরিস্থিতিতে স্মার্ট ডিভাইস বা নারী শিক্ষকের দ্বারা পরিচয় সনাক্তের ব্যবস্থা করা হোক।’

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কারো কোনো অধিকার নাই ধর্মীয় বিষয়ে আঘাত করার। শিক্ষককে হতে হবে বাবার মতো। তার আচরণ, স্নেহ, ভাষা সবকিছু বাবার মতো হবে। কিন্তু আমাদের এখানে কিছু ব্যাত্যয় ঘটতেছে, আমাদের আচরণ বাবার মতো হচ্ছে না। এর কারণে এগুলো ঘটতেছে। আমি উপাচার্যের সাথে কথা বলবো। তবে তোমরা বিক্ষুব্ধ হয়ো না।’

এর আগে, গত ১৩ ডিসেম্বর (বুধবার) বিভাগটির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ওই শিক্ষার্থী নেকাব পরিহিত অবস্থান ভাইভা দিতে আসেন। ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ তার পরিচয় নিশ্চিতের জন্য নেকাব খুলতে বলেন।

তবে ওই শিক্ষার্থী নেকাব খুলতে অস্বীকৃতি জানায়। এবং প্রয়োজনে নারী শিক্ষকের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করার দাবি জানান। তবে সে নেকাব না খোলায় উপস্থিত শিক্ষকরা তার ভাইভা পরীক্ষা নিতে অসম্মতি জানান। এরপর দীর্ঘ এক মাস ওই শিক্ষার্থীর ভাইভা না নেওয়ার অভিযোগ উঠে বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। জানা যায়, উক্ত বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি শিমুল রায়, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা এবং বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ।