নিজের দেওয়া বক্তব্য থেকে সরে এলেন খুলনার ডিআইজি

ফরহাদ মজহার অপহরণের ঘটনায় প্রেস ব্রিফিংকালে ঘটনাটি নাটক বলে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে যে সায় দিয়েছিলেন তা থেকে সরে এসেছেন খুলনা রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি দিদার আহমেদ। রাতে দেওয়া ওই বক্তব্য প্রাসঙ্গিক ছিল না বলে তিনি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টার দিকে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে আমি এটা বলেছিলাম। ঢাকার পুলিশ যা বলেছে সেটাই ঠিক। কেননা তারা বিষয়টির তদন্ত করছে।’

‘সোমবার রাতে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন ব্রিফিংয়ের ওই বক্তব্যের বিষয়ে আপনি এখনো স্থির কি না’ জানতে চাইলে ডিআইজি বলেন, ‘ফরহাদ মজহারকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঢাকার পুলিশ বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তারা যা বলেছে সেটাই প্রাসঙ্গিক। আমি ব্রিফিংয়ে যা বলেছি তা প্রাসঙ্গিক না।’

কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়নি। তিনি স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে ভ্রমণের উদ্দেশে বের হয়েছিলেন। খুলনায় সোমবার দিনগত রাত একটার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ এ দাবি করেছিলেন।

এর আগে ঢাকার শ্যামলীর বাসা থেকে নিখোঁজের ১৮ ঘণ্টা পর সোমবার রাতে যশোরের নওয়াপাড়ায় ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করে র‍্যাব। এরপর তাকে খুলনার ফুলতলায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে সংবাদ সম্মেলনে দিদার আহমেদ বলেন, ‘ফরহাদ মজহার অপহরণ হননি। তিনি স্বাভাবিকভাবে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। উদ্ধারের সময় ফরহাদ মজহারের কাছে একটি ব্যাগ পাওয়া গেছে। এতে দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্র ছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বেড়াতে গেলে যেমন প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিয়ে নেই। তার ব্যাগের ভেতর থাকা টাকা, মোবাইল চার্জারসহ তেমন জিনিসপত্র প্রমাণ করে তিনি স্বেচ্ছায় ভ্রমণের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন।’

খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি আরো বলেন, ‘ফরহাদ মজহার সুস্থ-সবল মানুষের মতোই বাসে যাত্রী হিসেবে ভ্রমণ করছিলেন।’

তবে পুলিশের এ দাবি নাকচ করে ফরহাদ মজহারের পরিবার জানায়, ‘বাসার সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে তারা দেখেছেন, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার (ফরহাদ মজহার) হাতে কোনো ধরনের ব্যাগপত্র ছিল না।’

তারা এও জানান, উদ্ধারের পর ফরহাদ মজহার পরিবারকে জানিয়েছেন- ‘সন্ধ্যার পর তার চোখের বাঁধন খোলা হয়।’

মঙ্গলবার দুপুরে ফরহাদ মজহারকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় ফরহাদ মজহার ১৬৪ ধারায় ঘটনার বর্ণনা দেন। একই সময় ফরহাদ মজহারকে নিজ জিম্মায় ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। মহানগর হাকিম এস এম মাসুদুজ্জামান ফরহাদ মজহারের কাছে জানতে চান, ‘আপনি নিজ জিম্মায় যাবেন কি না? তখন ফরহাদ মজহার মাথা নেড়ে সম্মতি দেন। এরপর মহানগর হাকিম ১০ হাজার টাকার বন্ডে ফরহাদ মজহারকে নিজ জিম্মায় দেন। পরে শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় ফরহাদ মজহারকে বারডেমে ভর্তি করা হয়। তিনি উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিকে ভুগছেন।

ফরহাদ মজহারকে সোমবার ভোর থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে তার পরিবার আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে। পরে সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে যশোরের নওয়াপাড়ায় খুলনা থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে তাকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

খুলনা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ফরহাদ মজহারকে রাজধানীর আদাবর থানায় আনা হয়। সেখান থেকে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিএমপির (মিডিয়া) যুগ্মকমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফরহাদ মজহার জানিয়েছেন- সোমবার সকালে ওষুধ কেনার জন্য তিনি বের হলে কয়েকজন অজ্ঞাত লোক চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। এরপর তিনি আর কিছুই জানেন না।’