পাঁচ বছর পর আইএস নেতা বাগদাদির ভিডিও কেন?

ইসলামিক স্টেট গ্রুপ যাকে তাদের নেতা হিসেবে প্রচার করে – সেই আবু বকর আল বাগদাদিকে প্রায় পাঁচ বছর পর এই প্রথমবার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে।

ইরাক ও সিরিয়ায় কায়েম করা তাদের স্বঘোষিত খেলাফতের বিলুপ্তির পর এই ভিডিও ছেড়ে কি বার্তা দিচ্ছে আইএস?

গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার আল-বাগদাদির নিহত হবার খবর বেরোয়, তবে এই ভিডিওটিতে শেষ পর্যন্ত তাকে জীবিত এবং বক্তৃতারত অবস্থায় দেখা গেল।

অনেক বিশ্লেষক এর সাথে আল-কায়েদার নিহত নেতা ওসামা বিন লাদেন বা ইরাকী আল-কায়েদা নেতা আবু মুসাব আল-জারকাবির ভিডিওগুলোর মিল দেখতে পেয়েছেন।

লাদেন বা জারকাবির ভিডিওর মতোই মি. আল-বাগদাদি কালো পোশাক এবং সামরিক-ধাঁচের ওয়েস্টকোট পরে মাটিতে বসে কথা কথা বলছেন। তার পাশে একটি এ্যাসল্ট রাইফেল দেয়ালে হেলান দিয়ে রাখা আছে।

তার চেহারা এবং দাড়ির রঙে বুড়িয়ে যাবার আভাস আছে, বলছেন বিশ্লেষকরা – যদিও তার বয়স মাত্র ৪৭। তার দাড়িতে মেহেদির রঙও দেখা যাচ্ছে। আল-বাগদাদি একজন ইরাকি এবং তার আসল নাম ইব্রাহিম আওয়াদ ইব্রাহিম আল-বাদরি।

শেষ বার তাকে ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল ২০১৪ সালে। ইরাকের মসুল শহরটি আইএস দখল করে নেবার পর সেখান থেকেই মি. আল-বাগদাদি ঘোষণা করেছিলেন, ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার কথা।

সেই এলাকাগুলোর সবই এখন তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। মি. আল-বাগদাদি ১৮ মিনিট লম্বা এই নতুন ভিডিওতে স্বীকার করেছেন যে আইএসের শেষ ঘাঁটি বাঘুজেরও পতন ঘটেছে।

আল-ফুরকান নামে একটি জঙ্গী গ্রুপের মিডিয়া নেটওয়ার্কে এই ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। কবে এটি ধারণ করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। ইসলামিক স্টেট নিজে বলছে, ভিডিওটি এপ্রিল মাসে ধারণ করা।

সাংবাদিক মাইকেল ওয়েইস বলছেন, আবুবকর আল-বাগদাদি স্পষ্টতই এ ভিডিওর মাধ্যমে বার্তা দিচ্ছেন যে তিনি জীবিত আছেন এবং এখনো আইএসের নেতৃত্বে আছেন।

কিছুকাল আগে ব্রিটেনের দি গার্ডিয়ান খবর দিয়েছিল যে মি. আল-বাগদাদির বিরুদ্ধে ফেব্রুয়ারি মাসে একটা অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছিল। পূর্ব সিরিয়ার এই অভ্যুত্থানকারীরা নাকি তার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত প্রভুত্ববাদী মানসিকতা দেখানোর অভিযোগ এনেছিল।

‘তিনি আইসিস পরিচালনায় দমনমূলক ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিলেন’ – সংগঠনটির কিছু সদস্যের অভিযোগ ছিল এটাই।

ফলে এ ভিডিওর মাধ্যমে মি.আল-বাগদাদি বিশ্বকে জানান দিলেন যে তিনি এখনো জীবিত এবং আইএসের নেতা রয়েছেন, যদিও তাকে ধরার জন্য ২৫ মিলিয়ন বা আড়াই কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

নতুন ভিডিওতে বাঘুজের পতনের কথা স্বীকার করলেও তিনি বলছেন, তিনি বুরকিনা ফাসো এবং মালির জঙ্গীদের কাছ থেকে আনুগত্যের অঙ্গীকার পেয়েছেন। তিনি সুদান ও আলজেরিয়ায় বিক্ষোভ নিয়ে কথা বলেছেন, এবং মন্তব্য করেছেন যে স্বৈরাচারীদের মোকাবিলায় একমাত্র সমাধান হচ্ছে জিহাদ।

ভিডিওর শেষ দিকে মি. আল-বাগদাদির একটি অডিও বার্তাও রয়েছে যাতে তিনি শ্রীলংকায় ইস্টার সানডের দিনের আক্রমণ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি মন্তব্য করেন যে আইএসে সবশেষ ঘাঁটি বাঘুজের পতনের প্রতিশোধ নিতেই শ্রীলংকার আক্রমণ চালানো হয়েছে।

তবে বিবিসি মনিটরিংএর বিশ্লেষক মিনা আল-লামি বলছেন, ওই আক্রমণের কৃতিত্ব দাবি করে আইএস আগে যে বার্তা দিয়েছিল তাতে বাঘুজের কোন উল্লেখ ছিল না।

বিবিসির বিশ্লেষক মার্টিন পেশেন্স বলছেন, মি. আল-বাগদাদি ইরাক ও সিরিয়ায় তাদের পরাজয় থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন। তার কথায়, বাঘুজের যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে তবে এ যুদ্ধের পরেও আরো অনেক কিছু আসছে।