পাবনায় এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই প্রসূতি মায়ের মৃত্যু, হাসপাতাল সিলগালা

পাবনা আইডিয়াল হাসপাতাল নামের একটি বেসরকারী হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক ঘণ্টার ব্যবধানে মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইন, ইনজেকনশসহ ভুল চিকিৎসায় দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (১৪ এপ্রিল) রাত ৩ টার দিকে পৃথক পৃথক সিজারিয়ান অপারেশনে এই ঘটনা ঘটে।

এদিকে খবর পেয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সরেজমিন পরিদর্শন করে হাসপাতালটি সিলগালা করে বন্ধ করে দিয়েছে। ঘটনা অনুসন্ধানে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।

নিহতদের স্বজনদের দাবী, মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইন, ইনজেকশসহ ভুল চিকিৎসার কারণে প্রসূতিদের মৃত্যু হয়েছে।

মারা যাওয়া দুই প্রসূতি হলেন– পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুরের স্বপ্না খাতুন ও কুষ্টিয়ার শিলাইদহ গ্রামের মাহবুব বিশ্বাসের স্ত্রী ইনসানা খাতুন। ঘটনার আগের দিন প্রসব বেদনা উঠলে তাদের এই হাসপাতালে ভর্তি করান স্বজনরা।

নিহত ইনসানা খাতুনের স্বজনরা জানান,, ডাঃ জাহিদা জহুরা লীজা ইনসানা খাতুনের সিজারিয়ান অপারেশন করেন। তার ভুল চিকিৎসায় এমন মৃত্যু হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।

অন্যদিকে ডাঃ কাজী নাহিদা আক্তার লিপি একই হাসপাতালে স্বপ্না খাতুনের সিজারিয়ান অপারেশন করেন। এ পরিবারও ডাক্তারের ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যু অভিযোগের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান।

এ বিষয়ে হাসপাতালের একটি বিশ্বস্ত সূত্র নাম না প্রকাশ শর্তে জানান, চিকিৎসার সময়ে সিজারিয়ান রোগীকে যে স্যালাইন ও ইনজেকশন দেওয় হয়েছে সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। এছাড়াও সিজারিয়ান অপারেশনের সময়ে ভুল চিকিৎসা দেয়ায় প্রসুতি দুই মায়ের মৃত্যু হয়েছে। সূত্রটি আরও দাবী করেছে, উভয় চিকিৎসক অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ ছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, এরই মধ্যে এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে রোগীকে ভুল চিকিৎসা দেওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহার করায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। বারবারই এই হাসপাতালগুলো এ ধরণের মানুষ মারার মতো কাজ করলেও অজ্ঞাত কারণে পার পেয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপসহ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে বলে দাবী তাদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা আইডিয়াল হাসপাতালের অংশীদার আব্দুল্লাহ আরিফ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা সব সময় রোগীকে ভালো চিকিৎসা ও ভালো ওষুধ দিয়ে থাকি। অভিযোগগুলো সঠিক নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসেছিলেন। তারা তদন্ত করেছেন। তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তাদের তদন্তেই বেড়িয়ে আসবে প্রকৃত ঘটনা কি।’

পাবনার সিভিল সার্জন ডাঃ শহীদুল্লাহ দেওয়ান জানান, ঘটনাটি জানার পর ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনা অনুসন্ধানে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এ নিয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মাসুদ আলম বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। খবুই দুঃখজনক। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাইনী। অভিযোগ পেলে ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’