পাবনার ঈশ্বরদী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ

পাবনার ঈশ্বরদীতে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহমেদের (৫৮) বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কু-প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়াও প্রশিক্ষণ ও ঋণ নিতে, ঋণের কিস্তির টাকা জমা দিতে যুব উন্নয়ন কার্যালয়ে এবং উপজেলা পরিষদের অন্যান্য কার্যালয়ে আসা একাধিক মেয়েকে কুপ্রস্তাব দেওয়া সহ অশালীন আচরণ করার অনেক অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নানা রকম প্রলোভনসহ কুপ্রস্তাব দিয়ে বাসায় ডাকায় অতিষ্ট হয়ে উঠেন ওই মেয়ে। অবশেষে গত ২৪ মার্চ ওই মেয়ে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহমেদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

থানায় অভিযোগের বিষয়ে জানার পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারসহ ওই মেয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করেছেন বলে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঘটনাটি ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদসহ পুরো এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্মকর্তা মোরশেদ আহমেদের দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক নারী কেলেংকারীর ঘটনাগুলো নিয়ে নতুন করে সমালোচনা চলছে।

থানায় দায়ের করা অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, গত ১৭ জানুয়ারি ওই মেয়েটি তার এক সহপাঠীসহ ঈশ্বরদী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে থাকা উপজেলা নির্বাচন অফিসে ভোটার আইডি কার্ডের ফরম জমা দিতে যান। এই সময় যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সুকৌশলে তাদের ডেকে নানা রকম কথাবার্তা জিজ্ঞাসা করেন। এক পর্যায়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ওই মেয়ের মোবাইল নম্বর নেন। এরপর থেকেই কথাবার্তা বলা শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে ওই মেয়েকে কুপ্রস্তাব দেন। বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে সময় কাটানোর কথা বলেন।

অবশেষে অসহায় হয়ে মেয়েটি ঘটনাটি পরিবারকে জানিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

ভুক্তভোগী মেয়ের পরিবার জানান, একটা ছোট মেয়েকে চাকরির প্রলোভন দিয়ে বাবার চেয়ে বেশি বয়সী মানুষ এভাবে খারাপ প্রস্তাব দিতে পারে এটা ভাবায় যায় না। নানা রকম প্রলোভন দিয়ে এর আগেও অনেক মেয়েকে ফাঁসিয়েছেন মোরশেদ আহমেদ।

উপজেলার সাহাপুর ফকিরপাড়া এলাকার এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন মোরশেদ আহমেদ। কয়েক দফা সেই বাড়িতে গিয়ে এলাকাবাসীর হাতে আটক হয়েছেন। পরে লোকজন তাদের বিয়ে দিয়ে দেয় বলে জানা গেছে। এভাবে চলতে থাকলে যুব উন্নয়নের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিতে তো কোন মেয়েই যাবে না। আমরা নৈতিক চরিত্র স্খলনকৃত কর্মকর্তার শাস্তির দাবীতে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।

কিন্তু অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে আমাদের উপর চাপ দেওয়ানো হচ্ছে বলেও পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

এদিকে যুব উন্নয়ন কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, গত ১৭ জানুয়ারি/২০১১ সালে মোরশেদ আহমেদ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে ঈশ্বরদীতে যোগদান করেন।

এরপর থেকেই কার্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে ঢাকাতে চাকরি বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকা, মাসে দুই এক বার এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, প্রশিক্ষণভাতা, ঋণের টাকা আত্মসাত, অফিস কর্মচারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, প্রশিক্ষণ নিতে আসা মেয়েদের বাড়িতে যাওয়া, সখ্যতা গড়ে তোলা, কুপ্রস্তাব দেওয়াসহ নানা রকম অভিযোগে বেশ কয়েক দফা অধিদপ্তর থেকে তদন্তও এসেছিল।

তদন্তে সব অভিযোগ প্রমানিত হলেও অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়নি অধিদপ্তর। আর এসব কারণেই বারবার মেয়েদের সঙ্গে এত নোংরামী করে যাচ্ছেন এই কর্মকর্তা। ফলে অফিস স্টাফরাও অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাশ বলেন, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহমেদ কর্তৃক একটি মেয়েকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়েরের কথা শুনেছি। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই বিষয়টিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পাবনা জেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে (উপ-পরিচালক) বলা হয়েছে।

পাবনা জেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) স্বপন কুমার কর্মকার বলেন, ছেলে-মেয়েদের বেকারত্ব দূর করার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। সেখানে একজন কর্মকর্তা কর্তৃক মেয়েদের সঙ্গে এরকম অশালীন আচরণ, কূরুচিপূর্ণ প্রস্তাব দেওয়াটা খুবই দুঃখজনক।

আমরা বিষয়টি জানার পর একজন সহকারী পরিচালককে দিয়ে তদন্ত করিয়েছি। এখন ঈশ্বরদী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহমেদের বিষয়ে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহমেদ বলেন, আমার সঙ্গে মেয়েটির সুসম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের সুত্র ধরে মোবাইল অনেক কথা হয়েছে। মেয়েটি আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে। জানতে পেরে, স্থানীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ওই মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। এই নিয়ে আর লেখালেখি করার দরকার নেই।

এর আগেও এভাবে মেয়েদের নানা রকম প্রলোভন দিয়ে ফাঁসানোর বিষয়ে মোরশেদ আহমেদ জানান, আমি আগের মেয়েটিকে বিয়ে করেছি। সে আমার স্ত্রী। সেই বিষয়ে আর কোন কথা বলতে চাই না।

তবে নতুন করে আবার কেন শুরু করেছেন জানতে চাইলে মোরশেদ আহমেদ বলেন, একটা মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বললে যা হয় আর কি?