‘পাস্তুরিত দুধ নিয়ে কারসাজি আছে কি না দেখা উচিত’

পাস্তুরিত দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের কোনো কারসাজি আছে কি না- সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার লন্ডন থেকে টেলিকনফারেন্সে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় একথা বলেন তিনি। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির বিশেষ বর্ধিত সভা হয়। এ সময় মোবাইলে যুক্ত হয়ে দুধ ইস্যু ছাড়াও ডেঙ্গু, বন্যা, গুজব প্রতিরোধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে নির্দেশনা দেন সরকারপ্রধান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বাজারে সহজলভ্য পাস্তুরিত দুধে দুই দফা পরীক্ষা চালিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি শনাক্ত করেন। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নানা মহলের রোষানলে পড়েন তিনি। গবেষণা নিয়ে আলোচনা হয় সংসদেও। দুধের প্রতিবেদন নিয়ে নানা মহল থেকে তাকে চাপ দেওয়া হয় বলেও গণমাধ্যমে অভিযোগ করেন অধ্যাপক ফারুক। এ নিয়ে হাইকোর্টে রিটও হয়।

এদিকে আদালতের নির্দেশ অনুসারে বিএসটিআই এর লাইসেন্স পাওয়া পাস্তুরিত দুধের নমুনা পরীক্ষা করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের ল্যাবরেটরি, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, এসব নমুনায় সিসা ও অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে গত রবিবার হাইকোর্ট ১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধের উৎপাদন, সরবরাহ, ক্রয়-বিক্রয় আগামী পাঁচ সপ্তাহের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন।

পরদিন সোমবার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ মিল্ক প্রডিউসারস কো অপারেটিভ ইউনিয়ন লিমিটেডের (মিল্কভিটা) পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বিক্রির ওপর হাইকোর্টের জারি করা নিষেধাজ্ঞা আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হঠাৎ কথা নেই, বার্তা নেই, একজন পরীক্ষা করে বলে দিলেন, দুধ ব্যবহারযোগ্য নয়। সঙ্গে সঙ্গে রিট করা হয়। সেখানে বলে দেয়া হয়, পাঁচ সপ্তাহ দুধ ব্যবহার করা যাবে না বা খাওয়ানো যাবে না। আমাদের যে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি, সাধারণ মানুষের যে বেঁচে থাকার পথগুলো সৃষ্টি করা, সেগুলো কেন বাধাগ্রস্ত করা হয়, এটাই আমার প্রশ্ন। এখানে আমার মনে হচ্ছে যে, আমদানিকারক যারা তাদের কোনো কারসাজি আছে কি না, সেটা আমাদের দেখা উচিত। বা তারা কোনোভাবে উৎসাহিত করছে কি না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন, তাদের এ বিষয়ে ভাবা উচিত, দেখা উচিত। হঠাৎ একটা গুজব ছড়িয়ে রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করা বা দেশের উৎপাদিত পণ্যের মান সম্পর্কে কথা বলা, এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। কাজেই যারা গুজব ছড়াবে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, যারা খামার করেছে বা গরু পালন করছে, তাদের কাছে থেকে দুধ কেনা হচ্ছে। এ মানুষগুলোর কাছে দারিদ্র বিমোচনের জন্য গরু কিনে দিয়েছি। তারা যদি দুধ বিক্রি করতে না পারে, অর্থ জোগাড় করতে না পারে, তাহলে গরুকে কী খাবার দেবে আর নিজে কিভাবে খাবার কিনে খাবে। এ বাস্তবতাটা চিন্তা করা দরকার।

বিদেশ থেকে যেসব দুধ আসে সেগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে কি না, জানতে চেয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যিনি দেশের দুধটা পরীক্ষা করেছেন তিনি বিদেশ থেকে আমদানি করা গুড়ো দুধগুলো পরীক্ষা করেছেন কি না? আমার মনে হয়, তিনি এটা কখনো করেন নাই। আমি অনুরোধ করব, তিনি যেন বিদেশ থেকে আমদানি করা গুড়ো দুধগুলো পরীক্ষা করে দেখেন। আমরা আমাদনিনির্ভর থাকতে চাই না, স্বনির্ভর থাকতে চাই। আমরা দেশের চাহিদা দেশের উৎপাদিত পণ্য দ্বারা মেটাতে চাই।’

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে খাদ্যপণ্যের পরীক্ষার জন্য বিএসটিআইকে উন্নত ও আধুনিক করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।