পাহাড় থেকে ৩০ ফুট নিচে পড়ে যান তারা

মানুষ যেখানে জন্মলাভ করে, যেখানকার আলো-বাতাস গ্রহণ করে বেড়ে ওঠে স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার মাটি-মানুষের প্রতি অন্যরকম হৃদ্য জন্মায়। জন্মভূমির প্রতি মানুষের এই টান সহজাত ও প্রকৃতিগত। নিজের জন্মভূমিকে ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। অনেক সময় মানুষ নিজের প্রাণের চেয়েও জন্মভূমিকে বেশি ভালোবাসে।

এ জন্যই তো জন্মভূমির জন্য অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেয়ার নজির স্থাপিত হয়েছে যুগে যুগে। আর এমনই এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করল সেনাবাহিনী সদস্যরা।

‘সমরে আমরা শান্তিতে আমরা সর্বত্রই আমরা দেশের তরে’- এই স্লোগান বুকে ধারণ করে দেশের সেবায় সদা প্রস্তুত থাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন এই বাহিনীর সদস্যরা।

রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনায় উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর সময় মঙ্গলবার দুই সেনা কর্মকর্তাসহ চার সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হন আরো ১০ জন। আহতদের পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন এক সেনা সদস্য।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মঙ্গলবার ভোরে রাঙামাটির মানিকছড়িতে একটি পাহাড় ধসে মাটি ও গাছ পড়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে রাঙামাটি জোন সদরের নির্দেশে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে।

উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালে বেলা ১১টার দিকে পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারী দলের ওপর ধসে পড়লে তারা মূল সড়ক থেকে ৩০ ফুট নিচে পড়ে যান। পরবর্তীতে একই ক্যাম্প থেকে আরো একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই সেনা কর্মকর্তাসহ চার সেনাসদস্যকে নিহত এবং ১০ সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।

আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়।

এদিকে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর সময় পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে সৈনিক মো. আজিজুর রহমান এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

নিহত মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হকের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায়। তিনি ৪৪ বিএমএ লং কোর্সের সঙ্গে কমিশন প্রাপ্ত হন। মাহফুজ পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলের জনক।

নিহত ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্তর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়। তিনি ৬৪ বিএমএ লং কোর্সের সঙ্গে কমিশন প্রাপ্ত হন। তানভীর সদ্য বিবাহিত ছিলেন।

নিহত কর্পোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হকের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ। তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। আজিজুল বিবাহিত এবং এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।

নিহত সৈনিক মো. শাহিন আলমের গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার আদমদিঘী। তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। শাহিন বিবাহিত এবং এক ছেলের জনক।

সৈনিক মো. আজিজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর। তিনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। আজিজুর বিবাহিত এবং এক মেয়ের জনক।
এদিকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক মঙ্গলবার বিকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তিনি হতাহত সকল সেনাসদস্য ও তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।

প্রসঙ্গত, গত তিন দিনের প্রবল বর্ষণের ফলে সোমবার থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস শুরু হয়। এতে হতাহত হওয়ার পাশাপাশি গোটা এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য বিভিন্ন সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা সোমবার থেকেই উদ্ধারকার্যে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে মঙ্গলবার এ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটল।