ডিগ্রি ছাড়াই ডাক্তারি, তবুও এলাকাবাসীর শেষ ভরসা ডাক্তার বাবু!

তিনি পাড়ার মানুষের ছোট ছোট সমস্যায় রক্ষাকর্তা। রাত-দিন সব সময়েই তিনিই ভরসা। অজয় ডাক্তার। কলকাতার দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা অজয় সিংহ অবশ্য নিজেকে ডাক্তার নয়, কম্পাউন্ডার হিসাবেই পরিচয় দেন।

বাড়িতে নেই কোনও ডাক্তার লেখা বোর্ড বা অন্য কিছু। ‘ভুয়ো চিকিত্সক’ ধরা পড়ার বাজারে অজয় যেন অন্যরকম। প্রতিবেশীদের দাবি অন্তত তেমনটাই।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকারই চিকিত্সক সমীরবরণ সরকারের সাহায্যকারী হিসাবে ১৯৭০ সাল থেকে কাজ করছেন অজয়। তিনি প্রাথমিক চিকিত্সা করে দেন স্থানীয়দের। তাকে আপন করে রেখেছেন এলাকার অধিকাংশ মানুষ।

অজয়কে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনি তো চিকিত্সক নন। তা হলে প্র্যাকটিস করছেন কী ভাবে?’ অজয় নিজের ঘর খুলে সেখানে নিয়ে গিয়ে দেখান তিনি সাদা কাগজে পরামর্শ এবং ওষুধ লিখে দেন। তিনি বলেন, ‘আমি ফার্মাসি পাশ করেছি। নিজেকে চিকিত্সক বলে দাবি করিনি কোনওদিন। আমি এক জন কম্পাউন্ডার। গরিব মানুষদের প্রাথমিক সাহায্য করে চিকিত্সকদের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিই।’

প্রতিবেশী রিকশচালক রামলাল সাউ বলেন, ‘শরীর খারাপ হলে অজয় ডাক্তারের কাছে যাই। টাকা থাকলে দিই। না হলে পরে দিই। তিনি আমাদের দেবতা।’ একই মন্তব্য মন্দির সংলগ্ন আন্নাকালী দেবী লেনের বাসিন্দা মানসী মণ্ডলের। একবার মাঝরাতে তার সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়লে ভরসা হয়েছিলেন ‘অজয় ডাক্তার’। ইঞ্জেকশন, স্যালাইন দেওয়ার পর পাঠিয়েছিলেন হাসপাতালে। এমনই নানা ঘটনার সাক্ষী এলাকার বাসিন্দারা।

অজয়ের ঘরে আসেন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভরাও। তিনি যে ডাক্তার নন, সে কথা স্পষ্ট বলে দেন বলে জানিয়েছেন এক মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ। ঘরে পড়ে রয়েছে ‘ডাক্তার অজয় সিংহ’ লেখা খামবন্ধ একাধিক মেডিক্যাল জার্নাল। তার সাদা কাগজে ওষুধের নাম লেখা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। কেন চিকিত্সক না হয়েও অজয় ওষুধ লেখেন?

এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিলের এক সদস্য বলেন, ‘সাদা কাগজ কেন, কোনও কাগজেই চিকিত্সক না হলে ওষুধের নাম লিখে প্র্যাকটিস করাটা বেআইনি।’

এ প্রসঙ্গে অজয়ের যুক্তি, ‘আমি লিখি। এই তো সোমবার মাঝরাতে ডিহাইড্রেশন নিয়ে দু’জন এসেছিলেন। ওষুধ লিখে দিলাম। সাগর দত্ত হাসপাতালে ভর্তি হতে বললাম। ভর্তি হয়েছেন। অপরাধ কোথায়?’ তবে, প্রতিবেশীদের কাছে ‘অজয় ডাক্তার’ ভুয়ো নন। কাছের মানুষ।