পিয়ংইয়ংয়ে মুন: কী থাকছে দুই নেতার আলোচনায়?

এক দশকের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে সস্ত্রীক উত্তর কোরিয়া সফরে গেছেন প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন। চলতি বছরের শুরুতে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রকরণ নিয়ে দুই কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে আলোচনা শুরু হয়েছে তা এগিয়ে নিতে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিবিসি ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার তিন দিনের সফরে স্ত্রী কিম জং-সুককে নিয়ে পিয়ংইয়ং পৌঁছেন মুন জায়ে ইন। এ সময় উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন ও তার স্ত্রী রি সল-জু তাদের স্বাগত জানান। সেইসঙ্গে উত্তর কোরীয় নাগরিকরাও নানা ব্যানার-ফেস্টুন হাতে নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানান।

এ নিয়ে চলতি বছর মুন ও কিমের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো দেখা হচ্ছে। এর আগে এপ্রিল মাসে দুই কোরিয়ার সীমান্তে দুই নেতার মধ্যে প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক বৈঠক হয়। মাঝে তারা আরো একবার মিলিত হন।

বিবিসি বলছে, কোরীয় উপদ্বীপকে কীভাবে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করা যায় সম্ভবত দুই নেতার মধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে নির্দিষ্ট কোনো ইস্যু জানা যায়নি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, অন্যান্য আলোচনার পাশাপাশি দুই কোরিয়ার মধ্যকার যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির ব্যাপারে চুক্তি হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ১৯৫৩ সালে দুই কোরিয়ার মধ্যকার যুদ্ধ মৌখিকভাবে শেষ হলেও আজ পর্যন্ত লিখিত কোনো চুক্তি হয়নি।

এ ছাড়া দুই কোরিয়ার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। সেইসঙ্গে দুই কোরিয়ার মধ্যে রিইউনিয়নের বিষয়টিও আলোচনার টেবিলে থাকবে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের বাকযুদ্ধের পর চলতি বছরের শুরুতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয় পিয়ংইয়ং। আর এ ব্যাপারে মধ্যস্থতা শুরু করে সিউল। এরপরই সীমান্তে দুই কোরিয়ার নেতাদের সাক্ষাৎ হয়।

এর ফলশ্রুতিতে জুন মাসে সিঙ্গাপুরে কিম ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈঠক হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, পিয়ংইয়ং তার কাছে থাকা পারমাণবিক অস্ত্র ধাপে ধাপে ধ্বংস করবে। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। কিন্তু এরপর আর বিষয়টি নিয়ে উল্লেখ করার মতো অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি।

সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও উত্তর কোরিয়া সফর করেছেন। কিন্তু পিয়ংইয়ংয়ের প্রতিশ্রুতি পূরণের তেমন কোনো অগ্রগতি তিনি দেখেননি বলে জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, পিয়ংইয়ং বলছে, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের শর্ত হিসেবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার যে শর্ত ছিল তার কোনো অগ্রগতি তারা দেখছে না।

এমনই অবস্থায় উত্তর কোরিয়া সফরে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন। স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া হচ্ছে, তাদের আলোচনায় গুরুত্ব পাবে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি।

তবে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা না গেলেও, এপ্রিলের ওই বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুই কোরিয়ার মধ্যে যে সম্পর্ক উন্নয়নের ধারা শুরু হয়েছে তা বলা যায়।

দুই কোরিয়ার সীমান্ত পানমুনজামে অনুষ্ঠিত আলোচনার পর উভয়দেশ তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে বেশি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে ভাগ হয়ে যাওয়া কোরিয়ার দুই প্রান্তে থাকা আত্মীয়-স্বজনরা এখন নিয়মতিভাবে সীমান্তে দেখা করতে পারছেন, যেটা আগে বছরে একবার সম্ভব হতো। এ জন্য সম্প্রতি একটি লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করেছে পিয়ংইয়ং ও সিউল।