পীরগঞ্জে আশ্রয়ন প্রকল্পে অনিয়ম : ২৬ মাসেও মেলেনি তদন্ত রির্পোট

২০১৯ সালের মে মাসে রংপুরের পীরগঞ্জে দরিদ্র পরিবারে জমি আছে অথচ ঘর নেই, এমন পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণে সীমাহীন অনিয়মের খবরে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠেছিল। সে সময়ে অনিয়ম খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পীরগঞ্জ আসনের এমপি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কড়া নির্দেশ প্রদান করেন। ২২ মে, ২০১৯ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি তদন্ত টিম পীরগঞ্জে আসে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহারুল আলম, মনিটরিং কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা কামাল, উপসহকারী প্রকৌশলী তমিজ উদ্দিন ও রংপুর জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি এডিসি (রাজস্ব) শরিফ মোহাম্মদ ফয়জুল আলম সরেজমিন তদন্ত করেন। তদন্ত টিম উপজেলার রায়পুর, কাবিলপুর ও চতরা ইউপি’র আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের বেশ কয়েকটি ঘর সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

দীর্ঘ ২৬ মাস পেরিয়ে গেলেও ওই তদন্তের রির্পোট আজও আলোর মুখ দেখেনি। উল্টো সে সময়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিএমএ মমিন পদোন্নতি নিয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে লালমনিরহাট জেলার এডিসি হিসেবে যোগদান করেছেন। এ প্রসঙ্গে পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. আজিজৃর রহমান রাঙ্গা বলেন, ওই সময়ে ঘর নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতি তুলে ধরে সাংবাদিকরা বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করেছিল। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও সোচ্চার ছিল। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠেছিল। কিন্তু তদন্ত কমিটি কি পেয়েছে, অদ্যই তদন্ত রিপোর্ট এসেছে কি না? তা অন্ধকারে রয়ে গেছে।

২০১৯ সালে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পে প্রথম পর্বে ২২৫টি ঘর নির্মাণে বরাদ্দ আসে। ১৫ মে, ২০১৯ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের হলদিবাড়ী (মধ্যপাড়া) গ্রামে ফাতেমা বেগম ও মমেনা বেগমের ঘর নির্মাণে নি¤œমান সামগ্রী ব্যবহারসহ নানা অভিযোগে ঘর নির্মাণে বাধাঁ দেয় গ্রামবাসী। তৎকালীন ইউএনও পুলিশ মোতায়েন করে জোর পুর্বক ঘর নির্মাণ কাজ চলমান রাখার চেষ্টা করলে পুলিশ ও গ্রামবাসীর মাঝে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সে সময়ে ১৭৫ বর্গফুট আয়তনের একটি মুল টিনের ঘরে ১২টি পিলারসহ বারান্দায় ৫টি এবং ল্যাট্রিনে ৪টি পিলার সম্বলিত ঘর নির্মাণে প্রতিটি ঘরের জন্য ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।

ঘর নির্মানের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রকল্প কমিটির সভাপতি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টি এম এ মমিনের পুর্বের কর্মস্থল দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে শফিকুল ইসলাম নামের এক মিস্ত্রীকে দিয়ে ওই সব ঘর নির্মাণ করতে থাকেন। প্রায় প্রতিটি ঘরে ঢালাই ছাড়াই পিলার স্থাপন, ঘরের মেঝে ৩ ইঞ্চি ঢালাই দেয়ার কথা থাকলেও দেড় বস্তা সিমেন্ট দিয়ে মাত্র ১ ইঞ্চি ঢালাই দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে চেয়ারম্যান গণের সাথে ইউএনও’র টানাপোড়ন শুরু হয়। এছাড়াও উপজেলা পরিষদের মাঠে ২২৫টি ঘরের পিলার তৈরী করা হয়েছিল। পিলারগুলো মেশিনে তৈরির কথা থাকলেও তা তৈরী হয়েছিল স্থানীয় কারিগরি পদ্ধতিতে। পিলারে ছয় এমএম গ্রেড রডের স্থলে ব্যবহার করা হচ্ছে পৌনে ৫ এমএম রড। পিলারের রড বাঁধাইয়ে রিং (চুড়ি) হিসেবে রডের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে জিআই তার। প্রথম শ্রেণির বদলে দ্বিতীয় শ্রেণির ইটের খোয়া (ডাস্টসহ) দিয়ে পিলার বানানো হয়েছিল। পিলার তৈরীতে বালু সিমেন্টের মিকচার ৪৫ মিনিটের মধ্যে শেষ করার নিয়ম থাকলেও একসাথে অনেকগুলো পিলারের মিকচার চলেছে প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘন্টা। পিলারের উপর ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত পানি দেয়ার অর্থাৎ কিউরিং করার কথা থাকলেও পর্যাপ্ত পানিও দেয়া হয়নি।