প্রকৃতিপ্রেমি একজন কলেজ শিক্ষক

মানুষ ও প্রকৃতি পরস্পরের পরিপূরক। প্রকৃতি ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচে না। মানুষ ছাড়াও প্রকৃতির মূল্য নেই। প্রকৃতিকে ভালোবাসা মানে নিজেকেই ভালোবাসা। এই যে পাহাড়, বন, শস্যখেত, নদী ও সমুদ্র নিয়ত মানুষের কল্যাণে নিবেদিত। এসব বাঁচিয়ে রাখার দায়ীত্ব মানুষের। প্রকৃতির জীব ও জড় প্রকৃতির সম্পদ। সবই প্রয়োজনে সৃষ্টি। এসবের ক্ষতি হলে প্রকৃতি বিরুপ হবেই। এই প্রকৃতি রক্ষায় কাজ করে চলেছেন মেহেরপুর পৌর কলেজের একজন শিক্ষক।

প্রকৃতি রক্ষায় নিবেদিত প্রাণ মেহেরপুর পৌর কলেজের ভ‚গোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রেজা। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে নাড়ির টানে চলে আসেন মেহেরপুরে। তিনি তিল তিল করে এ কলেজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে চলেছেন।

শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তুলতে বিশেষ করে পাখিদের অভয়াশ্রম তৈরি করতে প্রতিদিন বিকেল হলেই ক্যাম্পাসে ছুটে আসেন মাসুদ রেজা। কলেজের মালী নজরুল ইসলামকে নিয়ে, কখনও একাই গাছের পরিচর্যা করেন তিনি। গাছের গোড়ায় পানি ও সার দেওয়া, মাটিতে নিড়ানি দেওয়া, ডাল ছাঁটাইসহ নানা পরিচর্যা করেন নিজ হাতে। বিরল প্রকৃতির আর ঔষধি গাছ সংগ্রহ তার নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাখিদের অভয়াশ্রম তৈরি করতে গাছের ডালে ডালে কলস ও ঝুড়ি বেঁধে দিয়েছেন। সেখানে পাখিরা কিচির-মিচির করে আনন্দে মেতে থাকে। এই কলেজের গাছে গাছে বিভিন্ন প্রজাতির পেঁচা, শালিক, দোয়েল, ঘুঘু, ফিঙে, টুনটুনি, বেনে বৌ বাসা বেঁধে আছে। অনুকুল পরিবেশ পাওয়ায় বাচ্চা ফুটিয়ে থাকছে ইচ্ছেমতো। ক্যাম্পাসে রয়েছে কচ্ছপ, মাছ ও লালপদ্ম। মৌসুম এলেই ফোটে জাতীয় ফুল শাপলা। কলেজের বারান্দায় ফোটে বাহারি ফুল।

মাসুদ রেজা মনে করেন, মানুুষ তার ভালো কর্মফলের মাধ্যমে বেঁচে থাকে। এই দুষ্প্রাপ্য গাছ, পাখি, প্রকৃতির মাঝেই বেঁচে থাকতে চান তিনি। এ কাজে তাকে প্রথম উৎসাহ জোগান গাংনী ডিগ্রি কলেজের একই বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক এনামুল আযীম।

তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে আমার ইচ্ছা ছিল প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা। আমার সক্রিয় অংশগ্রহণ, মাসুদের আন্তরিকতা, পৌর কলেজ কর্তৃপক্ষের সক্রিয় সহযোগিতায় আজ কলেজটি বিরল প্রজাতির পাখি ও গাছে ভরে গেছে। সরেজমিনে দেখা যায় গাছে গাছে মাটির কলস ঝুলছে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বাসা বুনে মনের সুখে বসবাস করছে। শিক্ষার্থীসহ কেউ তাদের বসবাসে উত্তক্ত করেনা।

কলেজের ছাত্রী রুবানা খাতুন বলেন, মাসুদ স্যারের এই নিঃস্বার্থ কাজ দেখে উৎসাহ পাই আমরা। তিনি কোনো কাজকে ছোট মনে করেন না।

সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রেজার তথ্যানুযায়ী, এ কলেজে ফলজ, বনজ ও ঔষধি মিলে অন্তত পাঁচশ প্রজাতির গাছ আছে।

তিনি বলেন- সৃজনশীল সৃষ্টির সুপরিকল্পিত সুশৃঙ্খল পরিবেশ আমাদের সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সৃজনশীল হতে অনুপ্রাণিত করে। প্রকৃতির এই ধৈর্যশীলতা, মহানুভবতা, উদারতা, আমাদের বিবেক, আমাদের আমিত্ববোধ, আমাদের ইন্দ্রিয়প্রবণতাকে স্বচ্ছ, সংযত করার একটি বিস্ময়কর পাইপলাইন। তাই মানুষকে প্রকৃতিপ্রেমী হতে হবে। প্রকৃতিকে ধ্বংসলীলার দিকে ধাবিত করলেই নেমে আসবে অশনি সংকেত এবং প্রকৃতিপ্রেমী না হলে প্রেমময় নির্ঝঞ্ঝাট আগামীর বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব নয়।