প্রত্যন্ত চরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে উচ্ছাস স্কুল

আবুল বাশার মিরাজ : ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে- আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষৎ। “সবার জন্য শিক্ষা, চলো স্কুলে যাই ” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে প্রাথমিক শিক্ষা সবার জন্য বাধ্যতামূলক হলেও বগুড়া জেলার যমুনা নদী তীরবর্তী সারিয়াকান্দি উপজেলার প্রত্যন্ত চর এলাকার ‘চর শনপচাঁ গ্রামের শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। দরিদ্রতা, অসচেতনতার ফলে এসব শিশুদের সময়কাটত খেলাধুলা, নদীতে মাছ ধরে। একটি স্কুলের অভাবেই শিক্ষার আলো থেকে দূরে ছিল এ চরের শিশুরা। এবার এ গ্রামেই ‘আমাল ফাউন্ডেশন’ শুরু করেছে ‘উচ্ছাস স্কুল’। চলতি বছরের মার্চ মাসে এ স্কুলটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। যাত্রা শুরুর পর থেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে আলো ছড়ানো প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে স্কুলটি। স্কুলটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছে আইপিডিসি ফিনান্স।

স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা ও আমালের পরিচালক ইশরাত করিম ইভ বলেন, বছর দুয়েক আগে শনপচাঁ চরে ত্রাণ বিতরণ করতে এসেছিলাম। তখন একটি শিশুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। বাবু, কি হতে চাও? তখন সে বলেছিল, সে ডাক্তার হতে চায়। কিন্তু আমি মনে মনে ভাবতে থাকতে যেখানে পড়াশোনার জন্য স্কুল নেই, সেখানে এ শিশুদের স্বপ্নগুলো কিভাবে পূরণ হবে। সেই তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল এ চরে একটি একটি স্কুল করার। সেই স্বপ্ন দেরিতে হলেও পূরণ হয়েছে। এই স্কুলে চরের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর শিশুরা লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। আমাল ফাউন্ডেশন মনে করে এই স্কুলের যাত্রার মাধ্যমে এই এলাকায় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার ঘটবে এবং সমাজের বিভিন্ন ধরণের কুসংস্কার দূর হবে। সেই মহৎ লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

প্রাথমিক অবস্থায় ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এই ‘উচ্ছাস স্কুল’ এর যাত্রাা শুরু হয়। স্কুলটি ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে স্কুলটিতে শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের কে চিকিৎসা ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। আমালের স্কুল প্রজেক্ট ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম রকি বলেন, স্বপ্ন দেখে শেখার আগ্রহ আমাদের অনেক অসাধ্যকে সাধ্য করে তোলে। এগিয়ে যাওয়ার পথে এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরের পাশে সব সময় থাকবে আমাল ফাউন্ডেশন। কোনো স্বপ্ন যেন হারিয়ে না যায় সে লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় রয়েছে আমাদের।

স্কুলটি সর্ম্পকে জানতে চাইলে আমালের জেনারেল সেক্রেটারি ইফরিত করিম বলেন, সমাজের প্রতিটি শিশুর মৌলিক চাহিদা হচ্ছে শিক্ষা। এ চরের শিশুরা এ চাহিদা থেকে দূরে ছিল। আমরা মনে করি, প্রতিটি শিশুর শিক্ষায় সমান সুযোগ পাওয়া উচিত। কিন্তু শনপচাঁ চরে এর আগে কোন স্কুল ছিল না, এ কারণেই তারা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। আমরা দেখেছি অন্যদের মত চরের শিশুরার অনেক মেধাবী ও পড়ালেখায় বেশ মনেযোগি। আশা করি শিক্ষা গ্রহণের পর এদের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হবে, পরিবর্তন হবে বাংলাদেশের। চরের শিশুদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা আমালের মত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।