প্রশ্নফাঁসে বাতিল হলো কওমির দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা

প্রশ্নফাঁস হওয়ায় কওমি মাদরাসার অধিভুক্ত দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। শনিবার (১২ এপ্রিল) এক জরুরি বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেয় আহমদ শফীর নিয়ন্ত্রণাধীন কওমি মাদরাসাগুলোর সরকারি বোর্ড আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। সনদের সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়া পরীক্ষা নিয়ে হোচট খেলো এ সংস্থাটি।

শনিবার সকালে ঢাকার মতিঝিলে সংস্থাটির কার্যালয়ে আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলীর সভাপতিত্বে একটি জরুরি বৈঠকে বসে নেতারা এ সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান দায়িত্বশীলরা। বৈঠকে দাওরায়ে হাদিসের প্রশ্নপত্র ফাঁস বিষয়ে জরুরি আলোচনা হয় । বৈঠকে পরবর্তী সকল পরীক্ষা স্থগিত ও অনুষ্ঠিত সব পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দৈনিক শিক্ষার প্রতিনিধিকে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেন হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।

বাহাউদ্দিন জাকারিয়া জানান, পরীক্ষার নতুন তারিখ নির্ধারণ, প্রশ্নফাঁসরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক চলছে। শিগগিরই দ্রুত তারিখ ঘোষণা করা হবে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আল হাইয়াতুল উলইয়ার আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, মুফতি রুহুল আমিন, মুফতি আরশাদ রাহমানী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা শামসুদ্দিন জিয়া, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মুফতি মোহাম্মদ আলী ও মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস প্রমুখ।

আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে ৬টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ২৬ হাজার ৭২১ জন শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। হাইয়াতুল উলইয়ার অধীনে ৬টি শিক্ষা বোর্ড হলো বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশ, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ, আজাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশ, তানজিমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশ এবং জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড। এ মাসের ৮ এপ্রিল কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৮ এপ্রিল।

এদিকে, বৈঠকে উপস্থিত হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য মাওলানা মুসলেহুদ্দিন রাজু জানান, বাতিল হওয়া সকল পরীক্ষা নতুন করে অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হাইয়ার বৈঠকে পরীক্ষার নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়। আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত পরীক্ষার নতুন সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ১ মে বিশ্ব শ্রমিক দিবস উপলক্ষে পরীক্ষা বিরতি থাকবে। এছাড়া বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।

গত কয়েকদিন ধরেই প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা হচ্ছিল। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে বোর্ডের আলেমরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে তা প্রতিরোধ করতে নতুন করে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একইসঙ্গে প্রশ্নপত্র পরিবহন, কেন্দ্রে কেন্দ্রে নেয়া, বিশেষ তালার ব্যবস্থা করা, তালার চাবি সুনির্দিষ্ট এক থেকে দুজনের কাছে রাখার বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেন বোর্ডের কর্তা আলেমরা।

অন্যদিকে, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠায় বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড-এর (বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ) চলমান ৪২তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষার মেশকাত জামাতের (ফজিলত) পরীক্ষা কর্তৃপক্ষ স্থগিত করেছে বলে জানান বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। তিনি আরও জানান, ফজিলত ১ম বর্ষে গৃহীত সকল পরীক্ষা বাতিল ও অনুষ্ঠিতব্য সকল বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করেছে বেফাক কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার নতুন সময়সূচি জানানো হবে।

গত ৮ এপ্রিল থেকে সারাদেশে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ) এর ৪২তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষা শুরু হয়। এবার সারাদেশে ২৯টি জোনের মাধ্যমে এক হাজার ৪৮২টি কেন্দ্রে, এক লাখ ৫২ হাজার ৩৯৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনে ১৯ সেপ্টেম্বর ‘কওমি মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল)-এর সনদকে আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীনে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান বিল ২০১৮’ পাস হয়।

২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে কওমি সনদকে মাস্টার্সের সমমান ঘোষণা ও গেজেট প্রকাশ হয়।