বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রে মসলা ফসলের ৫১টি জাত ও ১৫৬টি প্রযুক্তির উদ্ভাবন

ভারতীয় উপমহাদেশে মসলার আদি ব্যবহার মূলত রং ও ওষুধ হিসেবে ছিল। ঔষধি গুণের কারনেই এটি পরে খাবারের অবিচ্ছেদ্য উপাদান হয় ওঠে । ২ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এ উপমহাদেশে মসলা দারুচিনি, কালা মরিচ ও ভেষজ দিয়ে বিকশিত হয়েছিল । সুগন্ধি ও উদ্বায়ী তেল থাকার জন্যই মসলার কদর। খাদ্যর স্বাদ বাড়াতে সহায়তা করলেও মসলা কোন প্রধান খাদ্য নয়।

সাধারনত: গ্রীষ্মমন্ডলীয় কিছু উদ্ভিদ থেকেই প্রধানত মসলা সংগহীত হয়। স্পাইস শব্দটি প্রাচীন ফরাসি শব্দ থেকে এসেছে। যার বাংলা নাম হচ্ছে মসলা। বিশ্বে প্রায় ১১৩ টি মসলা ফসলরে চাষ হলেও বাংলাদেশে ৩০ ধরনের মসলা ফসল চাষ করা হয়। আমাদের দেশের খাবার তালিকায় প্রায় ৩৫ রকমের মসলার ব্যবহার করা হয়। দেশের সকল অঞ্চলে মসলার আবাদ কাংখিত মানের না হওয়ার বিদেশ থেকে প্রতিবছর মসলা আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটানো হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বগুড়া থেকে প্রায় ১৮ কিলামিটার উত্তরে মহাস্থানগড়ের অদূরে শিবগঞ্জ উপজেলায় ৭০ একর জমির ওপর এই মসলা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হয় ১৯৯৬ সাল।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) অধিনে এ গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত হয়। কেন্দ্রটিতে মসলার বহুমুখী জাত উদ্ভাবন করে সকলের নজরে এসেছে । এ মসলা গবেষণা কেন্দ্রের অধীনে ৩টি আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র ও ৪টি উপ-আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। আঞ্চলিক মসলা কেন্দ্র মাগুরা, কুমিল্লা ও গাজীপুর। উপ-আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র লালমনিরহাট, ফরিদপুর, সিলেট ও খাগড়াছড়িতে।

মসলা গবেষকগন বলেছেন, শিবগঞ্জ মসলা গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবন মসলা মাঠ পর্যায় কৃষকদের মাঝে পৌছে দিতে পারলে মসলা আমদানিতে বহু কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে না। মসলা চাষ ও গবেষণায় দেশ অনেক এগিয় গিয়েছে। দেশে প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমিতে মসলা ফসল চাষ উৎপাদিত হচ্ছে।এতে ৪৪.৯৬ লক্ষ মট্রিক টন মসলা হবে। যা মোট চাহিদার ৫৮.৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। এছাড়াও ৪৪.৯৬ লক্ষ মেট্রিক টন মসলা আমদানি করতে হয়। তারপরও দেশে মসলার ঘাটতি রয়েছে ১৩.৫৪ লক্ষ মেট্রিক টন । তাদের ভাষ্য মতে, ২০১৯-২০২০ সালে মসলা আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। বিবিএস এর তথ্য মতে, মাথাপিছু মসলা গ্রহণেরর পরিমান ৭২ গ্রাম। কি ঘাটতির কারণ তা গ্রহণ করতে পারছেনা ভোক্তাশ্রেণি।

শিবগঞ্জ মসলা গবেষনা কেন্দ্রের তথ্য মতে, এ গবেষণা কেন্দ্রে এ পর্যায়ে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) নানা জাতের মসলা উউদ্ভাবন করেছে। এ পর্যায়ে ৪৬ টি মসলা ফসল নিয়ে গবেষণা করে ১৫৬টি মসলা ফসলের প্রযুক্তি ও ৫১টি জাত উদ্ভাবন করেছে এ গবেষণা কেন্দ্রে। এর মধ্যে পেয়াজের ৭টি, পাতা পেয়াজের ১টি, মরিচের ৪টি, অর্নামেটাল মরিচের ২টি, রসুনের ৪টি, আদার ৩টি, হলুদের ৫টি, ধনিয়ার ২টি, বিলাতি ধনিয়ার ১টি, কালাজিরার ১টি, মেথীর ৩টি, ফিরিঙ্গী ১টি, মেরির ২টি, শলুক ১টি, রাধুনী ১টি, জাউন ১টি, একাঙ্গীর ১টি, চিভর ১টি, পুদিনার ২টি, আলুবোখারার ১টি, দারুচিনি ১টি, তেজপাতা ১টি, গোলমরিচের ১টি, পানের ৩টি, এবং জিরার ১টি জাত। যা বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে।