বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এর জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এর ১৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদের উদ্যোগে ১০ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩.৩০ মিনিটে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ উপনেতা, অগ্নিকন্যা বেগম মতিয়া চৌধুরী, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য, অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম মৃধা। আরো আলোচনা করেন সেলিমুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাহিত্য ও গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট সাইফুদ্দিন শাহীন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বেগম মুজিব ছিলেন একজন নিরহংকারী, সৎ, নিষ্ঠাবান দেশপ্রেমিক আদর্শ মহিয়সী নারী। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে বেগম মুজিব সব সময় বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের পাশে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নির্মাণে বেগম মুজিব ছিলেন অকুতভয়। ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে তিনি একটি অনিশ্চিত জীবন-যাপন করেছেন। বঙ্গবন্ধু তার যৌবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো কারাগারে কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাকালীন বেগম মুজিব একদিকে যেমন সংসার এবং সন্তানদের লালন পালন করেছেন অন্যদিকে তিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজী রেখে কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন নির্লোভ। অর্থবিত্ত তাকে কখনও আকর্ষণ করেনি। তাই একজন জাতীয় নেতা ও পরবর্তীতে রাষ্ট্র প্রধানের স্ত্রী হয়েও অত্যন্ত সাধারণ মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্তের পরিবারের সদস্যদের মতো তিনি জীবন যাপন করেছেন। আরাম আয়েশ, বিলাসিতা, ধন-সম্পদ তার আরাধ্য ছিল না। বরং স্বদেশ্যের জন্য এবং স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করবার ক্ষেত্রেই তিনি আনন্দ পেতেন। বক্তাগণ বেগম মুজিবকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তার জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য জাতিকে আহবান জানান।

এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারের বিরুদ্ধে আবার আগুন-সন্ত্রাস শুরু করেছে। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্রে বিদেশীরাও জড়িত হয়েছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব বিদেশী রাষ্ট্র স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল তারা আবার সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা বিশ্বের বুকে একটি দৃষ্টান্ত । তাই দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। তাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হবে। কোন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নয়। আগামী নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষই আবার ক্ষমতায় আসবে। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মোঃ মশিউর রহমান বলেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ইতিহাসের একজন সংগ্রামী ও নিষ্ঠাবান মহিয়সী নারী হিসেবে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। পরিবারের সকলের দুঃখ বেদনাকে নিজের করে নিয়ে নিজেই সব দুঃখের সঙ্গী হয়েছেন। ৭৫’র ১৫ই আগস্টে তাকে সপরিবারে হত্যা করে ঘাতকেরা খান্ত হননি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও ধ্বংস করতে উদ্ধত হয়েছে। বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুর সহযাত্রী হিসেবে সব সময় অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। যা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে অত্যন্ত সহায়ক হয়েছে।

বিশেষ অতিথি এডভোকেট বলরাম পোদ্দার বলেন, বঙ্গমাতার সহযোগিতা ছাড়া বঙ্গবন্ধু এতো বড় নেতা হতে পারতেন না। তিনি সব সময় বঙ্গবন্ধুকে ছায়ার মতো করে আকড়ে রেখেছেন। রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুকে উৎসাহিত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের সাথে তিনিও সংগ্রামী হয়ে উঠেছেন। আজকে আমরা তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সহযোগিতা করেছেন, অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছেন, অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। সর্বপরী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তিনি একজন স্নেহময়ী মাতার মতই তিনি ভূমিকা পালন করেছেন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম মৃধা বলেন, বঙ্গবন্ধু এতবড় নেতা তথা জাতির পিতা হওয়ায় নেপথ্যে বেগম মুজিবের অসাধারণ অবদান ছিল। তিনি ছিলেন একজন মহিয়সী সৎ ও সাদাসিটা সহজ সরল জীবনের অভ্যস্ত এক আলোকিত মানুষ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন।