বাংলাদেশের মানবপাচার পরিস্থিতি আগের চেয়েও খারাপ

বাংলাদেশের মানবপাচারের পরিস্থিতি পর্যায়ক্রমে আরও খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে। মানবপাচার রোধে দেশটি নেয়া ব্যবস্থা মূলত ব্যর্থ হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রকাশিত মানবপাচার সংক্রান্ত ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের মানবপাচার পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপের পথে ধাবমান এবং দেশটির সরকার মানবপাচার প্রতিরোধে ন্যূনতম অগ্রগতি অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।

‘ইউএস হিউমান ট্রাফিকিং রিপোর্ট ২০১৭’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমনে বাংলাদেশ সরকারের উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টার প্রতিফলন হিসেবে ২০১২ সালে আইন পাশ করা হয়। একই সঙ্গে ২০১৫-১৭ সালের মধ্যে মানবপাচার বন্ধে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হয়।

কিন্তু এরপরও দেশটি মানবপাচার প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে। মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ বাস্তবায়নের পরও খুব কম সংখ্যক পাচারকারীকে দণ্ড দেয়া হচ্ছে।

মানবপাচার রোধে প্রয়োজনীয় পদ্ধতি যথাযথভাবে অনুসরণ ও প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে মানবপাচার সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলা, এর তদন্ত, আইনি প্রক্রিয়া ও বিচারিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ শেষে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

‘ট্রাফিকিং ইন পারসন’ শীর্ষক বার্ষিক ওই প্রতিবেদনে গত পাঁচ বছর বাংলাদেশকে রাখা হয়েছিল দ্বিতীয় স্তরে (টায়ার-টু)। এবার এক ধাপ নামিয়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্তরের ‘নজরদারিতে থাকা দেশের’ তালিকায় (টায়ার-টু ওয়াচ লিস্ট) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সৌদি আরব, আলজেরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও হয়কংসহ ৪৫টি দেশ এই নজরদারির তালিকায় রয়েছে। আর চীন, রাশিয়া ও ইরানকে এবার রাখা হয়েছে মানব পাচার পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বাজে দেশের স্তরে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মানবপাচার এখনও বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। কিন্তু এসব অপরাধের তদন্ত করে দোষী কর্মকর্তা, সীমান্তরক্ষী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের মুখোমুখির ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।

‘তদন্তে যথেষ্ট জনবল না পাওয়া এবং দ্রুত মামলা শেষ করার প্রবণতার কারণে বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে মানবপাচারের মামলাগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে। সরকার মানবপাচার বন্ধে আইন ও একটি কর্মপরিকল্পনার খসড়া করলেও আগের বছরের তুলনায় এক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি।’

মানবপাচার রোধে কিছু পরামর্শও দেয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে কর্মীদের কাছ থেকে রিক্রুটিং ফি আদায় না করে তা চাকরিদাতার কাছ থেকে নেয়া, পাচারের শিকার মানুষের সুরক্ষায় নীতিমালা প্রণয়ন; সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা পাচারে জড়িত তাদের আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানো এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে মানবপাচারের অপরাধে মাত্র তিনটির বিচারকার্য সম্পন্ন করে শাস্তি দেয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল সাতটি এবং ২০১৪ সালে ছিল ১৮টি।