ভোলার তিন শতাধিক ঘাট শ্রমিক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন

করোনার কারণে নৌ-যান চলাচল বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন ভোলার ঘাট শ্রমিক সহ জেলার তিন শতাধিক ঘাট শ্রমিক।চরম অভাব অনটন আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আয়-রোজগার বন্ধ থাকায় সংকটে পড়েছেন তারা। এতে থমকে গেছে তাদের জীবন জীবিকা। কবে নৌ-যান চলাচল শুরু হবে তখন তারা কাজে ফিরতে পারবেন সে অপেক্ষায় দিন গুণছেন।

জানা গেছে, জেলার সাত উপজেলায় অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অধীনে ঘাট রয়েছে ২৬টি। ওইসব ঘাটকে কেন্দ্র করে ঘাট শ্রমিকদের জীবিকা। নৌ-যান চলাচল করলে এসব ঘাট সরগরম থাকে। এতে মালামাল পরিবহন করে শ্রমিকরা আয়-রোজগার করে সংসার চালিয়ে থাকেন। কিন্তু গত এক বছরের বেশি সময় ধরে করোনা ভাইরাসের কারণে ভালো নেই এই ঘাট শ্রমিকরা। এর মধ্যে আবার গত ১১ দিন কঠোর লকডাউনের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে নৌ-যান চলাচল। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা।

ভোলা সদরের খেয়াঘাট, ভেদূুরিয়া, ইলিশা ও তালতলী কয়েকটি লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেছে, পুরো এলাকায় সুনশান নিরবতা। ঘাটে ব্যস্ততা নেই, নেই কোনো যাত্রী। যেখানে হকার ও শ্রমিকের হাঁকডাকে মুখরিত থাকে সেই ঘাটগুলোর এখন ভিন্ন চিত্র। চিরচেনা দৃশ্য পাল্টে গেছে। পুরো এলাকায় মানুষের সমাগম নেই। ঘাটে দেখা নেই শ্রমিকদের। তবে দু’চারজন শ্রমিককে আবার অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।
তাদের মধ্যে একজন আনোয়ার। তিনি জানালেন, ঘাটে শ্রমিক নেই। কাজ বন্ধ। সবাই বেকার হয়ে গেছেন। তাদের মত আমিও ভালো নেই। লকডাউনের আগে যখন লঞ্চ চলাচল করতো, তখন প্রতিদিন ২শ থেকে ৪শ টাকা রোজগার করছি। এখন সব রোজগার বন্ধ, পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে কষ্টে আছি।

একই কথা জানালেন অপর শ্রমিক শাহনেওয়াজ। তিনি বলেন, এখন আর ঘাটে কেউ আসে না। আমরা ঘাটেই কাজ করতাম, কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অভাবের মধ্যে আছি। অন্য কাজেও যেতে পারছি না।

ইলিশা লঞ্চঘাটের শ্রমিক সর্দার মো. লোকমান জানান, এখানে ২০/২৫ জন শ্রমিক ছিলো। এখন তাদের সবার আয় বন্ধ। সবাই কষ্টে আছেন। গত বছর লকডাউনে কম বেশি আমরা সবাই সহযোগিতা পেয়েছি, কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত কিছুই পাইনি। আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না।

ইলিশা তালতলী লঞ্চঘাটের শ্রমিক সর্দার আবু কালাম বলেন, আমাদের এখানে ১৪ জন শ্রমিক রয়েছে, লকডাউনে তাদের সবার জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে সীমাহীন কষ্টে আছেন। আমাদের সহযোগিতা করা হোক সরকারের কাছে আমাদের এটাই দাবি।
ইলিশা লঞ্চঘাটের ইজারাদার প্রতিনিধি মো. মহসিন জানান, ঘাট শ্রমিকরা যেমন কষ্টে আছেন, তেমন ঘাটের অন্যরাও কষ্টে আছেন। শ্রমিকদের ঘাটে এখন দেখা যায় না। পরিবার নিয়ে অভাব অনটনে ভালো নেই তারা।

ভোলার দায়িত্বরত বিআইডব্লিউটিএ সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, জেলার ২৬টি ঘাটে অন্তত তিন শতাধিক শ্রমিক রয়েছেন। তারা অনেক কষ্টে আছেন। তাদের কাজ বন্ধ-রোজগার বন্ধ। গত বছর লকডাউনে আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। সরকারিভাবে কোনো কিছু এলে তালিকা তৈরির মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর জানান, ঘাট শ্রমিকদের তালিকা তৈরি হয়ে গেছে, দ্রুত তাদের সহায়তার করা হবে।