জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বদলার হাঁটে ছুটছেন শ্রমজীবিরা

মরনঘাতী করোনার নিরব আক্রমনে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। ফলে এ ভাইরাসের সংক্রমন বিস্তার রোধে সারা দেশে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন দিয়েছে সরকার। মানব জীবন রক্ষায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সকল কর্মযজ্ঞ। আর এতেই ভোগান্তিতে পড়েছে শ্রম বিক্রি করে জীবীকায় নির্ভরশীল দিনমজুরির মানুষ। রাষ্টপক্ষ থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য দেয়া অপ্রতুল সহায়তায় মিটছে না খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা। ফলে বিধি নিষেধ উপক্ষো করে পেটের দায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও ঘরের বাইরে এসে করছেন কর্মের খোঁজ।

সমুদ্র উপক‚লীয় উপজেলা কলাপাড়া পৌর শহরের এতিখানা চৌ-রাস্তা এলাকায় প্রতিদিন সকালেই বসত বদলার হাঁট। আর এ হাট থেকেই প্রতিদিন শ্রমের বিনিময়ে অর্থ দিয়ে কিনে নেয়া হয় বদলা কিংবা কামলার মানুষ। বাসা বাড়ীর টুকটাক কাজ, মাটিকাটাসহ দিনমজুরি খাটতেই খুব সকালে এ হাঁটে আসেন ঘাম ঝড়ানো শ্রমজীবীরা। দিনশেষে কষ্টার্জিত অর্থ দিয়েই সাধ্যনুযায়ী পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ঘরে ফেরেন উপর্জনক্ষম মানুষগুলো। তবে চলমান এই করোনার মহাসঙ্কটে কর্ম হারিয়ে বদলার হাঁটেও এখন চলছে আহার যোগানোর হাহাকার।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ষাটোর্ধ্ব নুরুল হক, কাজের সন্ধ্যানে রাঙ্গাবালীর মৌডুবি থেকে এসেছেন এই বদলার হাঁটে। কিন্তু বেশ কয়েকদিনে কোন কাজ না পাওয়ায় হাঁটে এসেও পড়েছেন বিপাকে। কোন ধরনের সহায়তা না পাওয়ায় ঘরে ফেরার উপায় নেই বলে জানালেন দুঃখ দুর্দশার কথা।

টিয়াখালী ইউপির বাসীন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব জাকির হোসেন জীবীকার তাগিদে নিজ বাড়ি থেকে গত তিনদিন ধরে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে পদধুলি দিচ্ছেন শ্রমবিক্রির হাঁটে। তার ভাগ্যেও জোটেনি কর্মের সন্ধ্যান। ফলে মলিন মুখে খালি হাতেই প্রতিদিন বাড়ি ফিরছেন তিনি। তিনিও পাননি কোন সহায়তা কিংবা আশ্বাস।

কেবল জাকির হোসেন ও নুরুল হকই নয়, চলমান লকডাউন পরিস্থিতিতে কামাল হোসেন, নুরইসলাম, জাহাঙ্গীর মিয়াসহ হাজারো শ্রমজীবী, নি¤œ আয়ের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন চরম ভোগান্তিসহ আর্থিক সঙ্কটে। এসব মানুষের অভিযোগ দেশে করোনার শুরুর দিকে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বে-সরকারী, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও বিত্তবানরা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে চলমান ক্রান্তিলগ্নে অসহায় মানুষের দুয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তারাও।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুহাসনাত মো. শহীদুল হক জানান, করোনা কালীন সময়ে কর্মহীন দুঃস্থ মানুষের জন্য সরকারী নির্দেশনা মতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি। বিভিন্ন ইউনিয়নে ১২ লাখ টাকার খাদ্য সামগ্রী বিতরণ চলমান আছে। এছাড়া ৫ লাখ টাকার খাদ্য সামগ্রী কিনে প্যাকেটজাত করে বিতরণ করছি। এমনকি ট্রিপল থ্রীতে তথ্য আসার সাথে সাথে আমরা রেজিষ্টার ভুক্ত করি এবং দুরবর্তী এলাকায় হলে ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছি। কেউ যদি খাদ্য সঙ্কটে দিন মজুরি কাজ করতে আসে এ তথ্য আমাদের কাছে এলে অবশ্যই সহায়তা প্রদান করা হবে।