মধ্যরাতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১৯ কমিটি

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজ মাসুদ করিম। সেখানকার দোকান, সৈকতের নৌযান থেকে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে তার লোকজন। বঙ্গবন্ধু টানেল রোডে বসিয়েছেন অবৈধ মাইক্রোস্ট্যান্ড। আছে চাঁদাবাজি মামলা। প্রশাসনের কাছে পরিচিত ‘কুত্তা মাসুদ’ নামে। এই মাসুদের বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগ শাপেবর হয়েছে। তিনি পতেঙ্গা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটিতে সহসভাপতির পদ পেয়েছেন।

চান্দগাঁওয়ের মঈন উদ্দিন ফরহাদ গত এক যুগ ধরে প্রশাসনের তালিকায় অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী। চান্দগাঁও এলাকার ডজনের বেশি কিশোর গ্যাংয়ের নেতা। অপহরণ, জমি দখল, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে এলাকার নানা অপরাধে তার নাম উঠে আসে। লম্বা মহিউদ্দিন নামে পরিচিত মঈন একাধিকবার পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়ে জেলে গেছেন। রয়েছে কয়েকটি অস্ত্র মামলা।

এত সব অপরাধের জন্য তাকে ‘পুরস্কৃত’ করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সদ্য ঘোষিত চান্দগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে সভাপতির পদ পেয়েছেন মঈন। ২১ বছর পর ২০২২ সালের মার্চে দেবাশীষ নাথ দেবুকে সভাপতি ও আজিজুর রহমান আজিজকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০ সদস্যের কমিটি দেওয়া হয়। কমিটি গঠনের দুই বছর পার হলেও নিজেদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি দেবু-আজিজ। কিন্তু গত ১৩ মার্চ দিবাগত মধ্যরাতে একসঙ্গে নগরীর ৭ থানা ও ১২ ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা দেন সভাপতি ও সম্পাদক।

যেসব কমিটিতে পদ-পদবি দেওয়া হয়েছে সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে। পাহাড়তলী থানার সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে সুজন সর্ববিদ্যাকে। যিনি ২০১৯ সালের জুনে ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কিছু মামলা রয়েছে। এর বাইরে আবার বিএনপি- জামায়াতের অঙ্গসহযোগী সংগঠনের রাজনীতি করে আসা বেশ কয়েকজনও পদ পেয়েছেন। পাহাড়তলী থানার সহসভাপতি মোহাম্মদ আরমান হোসেন, আকবরশাহ থানার অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার বিএনপির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত থাকার ছবি ফেসবুকে ঘুরছে।

অভিযোগ উঠেছে, এসব কমিটি রাতদুপুরে ফেসবুকে নাজিল হয়েছে। নগর কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও বিএনপি-জামায়াতের অঙ্গসংগঠনের রাজনীতি করে আসা ব্যক্তিদের স্বেচ্ছাসেবক লীগে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এমনকি ১৯টি কমিটিকে কেন্দ্র করে নগর থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলছেন অনেকে। পুরো বিষয়টি নিয়ে বিরোধ পৌঁছেছে চরমে।
এদিকে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০ জনের কমিটির অন্তত ১২ জন এসব কমিটি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। যাদের মধ্যে সাতজন সহসভাপতি ও পাঁচজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ফেসবুকে প্রচারিত থানা ও ওয়ার্ডের ঘোষিত কমিটিগুলো অবৈধ এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্র বিরোধী। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজদের পুনর্বাসন করতে একটি পক্ষ এসব কমিটি দিয়েছে। এতে সংগঠনের সুনাম নষ্ট হচ্ছে, প্রকৃত নেতারা অবমূল্যায়িত হচ্ছেন।’

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলেন, ‘নগর কমিটি গঠনের পর সভাপতি ও সম্পাদক স্বেচ্ছাচারিতার সর্বোচ্চ চর্চা করে যাচ্ছেন। প্রতিটি কমিটি তাদের দুজনের মনগড়া। অন্য কারোর মতামত নেওয়া হয়নি। কেন্দ্রকেও জানানো হয়নি। এভাবে চিহ্নিত চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের কমিটিতে এনে সংগঠনকে বিতর্কিত করা হচ্ছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ বলেন, ‘যারা অভিযোগ তুলছেন তারা সংগঠনের কোনো কর্মসূচিতে থাকেন না। উনারা কেবল বিএনপির মতো নালিশ করেন। কেন্দ্র থেকে মিলেমিশে থাকতে বলার পরও উনারা অনুষ্ঠানে আসেন না। এরপরও নতুন কমিটিগুলোতে কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।’

সংগঠনের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর যারা সংগঠনের কর্মসূচিতে ছিলেন, যারা সবসময় সক্রিয় তাদেরকে নিয়েই কমিটি করেছি। এরপরও কেউ বিতর্কিত হলে ব্যবস্থা নিব। তবে যারা বিতর্ক করছেন তারা সবকিছুতেই বিভাজন তৈরি করতে চান।’