মিয়ানমারে ৫ রোহিঙ্গা গণকবরের সন্ধান : এপি

রাখাইনে গণহত্যা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের ৫ টি জায়গায় গণকবর দেওয়া হয়েছে, আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এপির অনুসন্ধানে এমনটা উঠে এসেছে। রোহিঙ্গা গ্রামে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও, বেঁচে যাওয়া দুই ডজন রোহিঙ্গা ও নিহতদের আত্মীয় স্বজনের স্বাক্ষ্য নিয়ে বৃহস্পতিবার এপির প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ গণকবরগুলোর কথা ওঠে আসে। আল জাজিরার সংবাদ।

ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমার বাহিনী কর্তৃক ৪০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়। এ ছাড়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগও ওঠে আসে প্রতিবেদনটিতে।

স্থানীয় লোকেরা গু দার পাইন রোহিঙ্গা গ্রামে গিয়ে ফুটবল খেলার জন্য দল বাছাইয়ের মত লোকদেরকে আলাদা করে এবং সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করে তাদের।

এ ঘটনায় বেঁচে যাওয়া নূর কাদির নামের এক রোহিঙ্গা দুইটি গণকবর থেকে তার ছয় বন্ধুর মৃতদেহ উদ্ধার করেন। তিনি বলেন, গায়ের জামা দেখে লাশগুলোকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে শুধু।

ধারণা করা হচ্ছে, ২৭ আগস্ট এ গণহত্যা সংগঠিত হয়। এ ঘটনায় বেঁচে যাওয়ারা এপিকে জানায়, সেনা সদস্যরা তাদের পাশবিকতার চিহ্ন লুকিয়ে ফেলতে নানা প্রচেষ্টা চালিয়েছে।

ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, এসিড দিয়ে নিহত রোহিঙ্গাদের মৃতদেহ নষ্ট করে ফেলার চেষ্টা চালিয়েছে সেনাবাহিনী।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটসের ফিল রবার্টসন জানান, গ্রামটিতে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে এসিড দিয়ে মৃতদেহ বিনষ্ট করে ফেলার প্রচেষ্টায় বুঝা যায় পরিকল্পিতভাবে এ নির্মমতা চালানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখনই উচিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য মিয়ানমারের সেনা কমান্ডার ও সদস্যদেরও ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা।

মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রতিনিধি ইয়াঙ্গি লি বলেন, এ হত্যাকাণ্ড এবং লাশ নষ্ট করার ঘটনা ‘জেনোসাইড’ চালানোরই নিদর্শন।

এর আগে ইন দিন গ্রামে একটি গণকবরে ১০ জনের লাশ পাওয়া গেছে বলে স্বীকার করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা গ্রামটিতে হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়। তবে মিয়ানমার দাবি করে, নিহতরা ছিল সন্ত্রাসী।

তবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অভিযুক্ত সেনা সদস্যদের বিচার করা হবে।

২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান ও স্থানীয় উগ্রবাদী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হামলায় সাড়ে ছয়লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। মিয়ানমারে সংঘটিত গণহত্যায় ১০ হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দাবি করে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা নারী শিশুদের ওপর গণধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগও ওঠে মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে।