মৃত্যুর আগে স্বীকৃতি চান বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী তিন বন্ধু

শোকাবহ ১৫ আগস্ট আজ। পচাত্তরের এই দিনে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় নাটোরের গুরুদাসপুরে তিন বন্ধুকে ২ বছর ডিটেনশন ও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাদের অপরাধ, মুজিব হত্যার বিচার চেয়ে স্লোগান দিয়েছিলেন। সেই থেকে তাদের ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন।

উত্তরবঙ্গে তারাই প্রথম জীবন বাজী রেখে মুজিব হত্যার বিচার চেয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। বিনিময়ে জেলের ঘানি টেনেছেন। পরিবার পরিজনসহ পদে পদে হয়েছেন লাঞ্ছিত। কিন্তু মুজিব হত্যার ৪৭ বছর কেটে গেলেও তাদের কেউ খোঁজ নেননি। মাঝে মধ্যে মন্ত্রী, এমপি ও আমলারা খোঁজ খবর নিলেও তিন বন্ধুর ভাগ্যের আর উন্নয়ন হয়নি। মুজিবপ্রেমী এই তিন বন্ধুকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো স্বীকৃতিও দেওয়া হয়নি।

এই তিন বন্ধু হলেন- প্রবীর কুমার বর্ম্মণ (৭০), অশোক কুমার পাল (৭০) ও নির্মল কর্মকার (৬৮)। ১৯৭৫ সালে ‘রক্তের বদলে রক্ত চাই, মুজিব হত্যার বিচার চাই’ স্লোগানে পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করেন তারা। আর এতেই তাদের ওপর নেমে আসে নির্মম অত্যাচার। তাদের পরিবারকেও রাখা হয়েছিল হুমকির মুখে।

টানা ২৯ মাস কারাভোগের পর ১৯৭৭ সালে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। মামলা মোকদ্দমা চালাতে গিয়ে গরু-ছাগল এবং ভিটেবাড়ি হারাতে হয়েছিল তাদের পরিবারের।

গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরকার এমদাদুল হক মোহাম্মদ আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিন বন্ধু প্রতিবাদ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নানাভাবে অত্যাচার করা হয়। এরা এখন নিঃস্বভাবে বেঁচে আছেন। তাদের সরকারিভাবে স্বীকৃতি দিয়ে মূল্যায়ন করা উচিত।

গুরুদাসপুর পৌর সদরে চাঁচকৈড় বাজার পাড়া মহল্লায় থাকেন এই তিন বন্ধু। প্রবীর বর্ম্মণ তার ছোট ভাইয়ের ইলেক্ট্রনিক্স দোকানে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি করছেন। নির্মল কর্মকার অসুস্থ। দুই ছেলে শিক্ষিত হলেও চাকরি হয়নি তাদের। তারা রংয়ের দোকান চালান। চিকিৎসা আর সংসার চালাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

আর অশোক পাল ছোট ছেলে-মেয়েদের গান শিখিয়ে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করছেন। যৌবনকালে কিছু করতে না পারায় অভাব তাদের পিছু ছাড়ছে না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভাব অনটনও তাদের বাড়ছে।

তারা বলেন, তখন কোনো কিছু না ভেবে ভয়কে উপেক্ষা করে মনের টানে প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার প্রতিবাদ করেছিলাম। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে পরিবারের জন্য তেমন কিছুই করতে পারিনি। বয়স হয়েছে। মৃত্যুর আগে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলে জীবনটা ধন্য হতো।