মৃত হিন্দু বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে কন্যাদান করলেন মুসলিম বন্ধু

মাস তিনেক হয়েছে প্রতিবেশী পুলিন শীল মারা গিয়াছে। যখন খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে পুলিন তখন তার ছেলে লিটন শীলকে দিয়ে তার বন্ধু দিদা আলমকে ডেকে এনে বলেন, ‘দিদার আমার মেয়েটির বিবাহের দায়িত্ব তোকেই দিয়ে যাচ্ছি, আমার পরিবর্তে তুই কন্যাদান করিস ভাই।’

দিদা আলম বলেন, ‘সেই হতে দায়িত্বটা আমি নিলাম। আজ কন্যাদানের লগ্ন। ব্রাহ্মণের মন্ত্র পাঠান্তে মেয়েটিকে সমর্পণ করে দিলাম। কন্যাদান একজন বাবার জন্য যে কত ব্যাথার এবং করুণার আমি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করিলাম।’

তিনি বলেন, ‘রিকা শীল যখন ‘কাকু’ বলে ডুকরে কেঁদে উঠল তখন চোখের পানি ধরে রাখা কঠিন হয়ে উঠে। মনে হয় একটা বিষ মাখা তীর আমার বুকটা এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল।’

বন্ধু মেয়ে সম্পর্কে বলতে গিয়ে দিদার বলেন, ‘রিকা আমার পাড়ার সব থেকে চঞ্চল ও সরল মেয়ে। যখনই দেখা হত ‘কাকু’ বলে ডাক দিত। যে দিন তার বাবা মারা যায় সেই দিন থেকে মেয়েটি কেমন জানি শান্ত হয়ে যায়। করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত। বাবার মৃত্যু মেয়েটিকে প্রচণ্ড আঘাত দেয়।’

“বিয়ের কথাবার্তা ঠিক হলে তাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘মা এই বর কি তোমার পছন্দ?’
রিকা এক কথায় জবাব দিল, ‘কাকু তোমাদের পছন্দই আমার পছন্দ’।
আরো বলে, ‘কাকু বাবার প্রতিজ্ঞা মতো তোমাকেই কন্যা দান করতে হবে।’

আজ আমি অশ্রু জড়িত চোখে আমার কন্যাদান করিলাম এক নব জীবন গড়ার মানসে। সুখী হউক রিকার দাম্পত্য জীবন, স্বর্গবাসী হউক তার বাবা। এই এক নতুন এবং করুণ অভিজ্ঞতা আমার।”

[দিদার আলমের ডায়েরি থেকে; নভেম্বর ১,২০১৬; বাঁশখালী, চট্রগ্রাম]