যুক্তরাষ্ট্রে মার্টিন লুথার কিং ডে সোমবার

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছরের মত এবারো জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সোমবার (১৬ জানুয়ারি) নানা আয়োজনে আমেরিকানরা পালন করবেন মার্টিন লুথার কিং ডে। আফ্রিকান-আমেরিকানদের নাগরিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র।

তিনি ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। ১৯৬৮ সালে তাঁকে হত্যা করা হয়। দিবসটিতে সারা দেশজুড়ে প্যারেড, বিভিন্ন কর্মসূচী এবং কমিউনিটির সেবার মধ্য দিয়ে তাঁকে সম্মান জানানো হয়। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। এই দিনটিকে জাতীয় সেবা দিবস হিসাবেও বিবেচনা করা হয়। এজন্য শত শত কমিউনিটি সেন্টার এবং সেচ্ছাসেবকরা তাদের এলাকায় খানিকটা পরিবর্তন আনতে কাজ করেন। তারা রাস্তা, খালি স্থান এবং পার্ক পরিস্কার করেন, ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি মেরামত করেন এবং গরীব ও গৃহহীনদের খাবার দেন। মার্টিন লুথার কিং, জুনিয়র বিখ্যাত আফ্রিকান-আমেরিকান মানবাধিকার কর্মী ছিলেন। তার খ্রিষ্টীয় ধর্মবিশ্বাস ও মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি নাগরিক ও মানবাধিকার আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যান। আমেরিকায় নাগরিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনের জন্য ১৯৬৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।

নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে তিনিই সর্বকনিষ্ঠ।১৯২৯ সালের ১৫ জানুয়ারি জর্জিয়ার আটলান্টায় মার্টিন লুথার কিং জন্মগ্রহণ করেন। মাইকেল কিং সিনিয়র এবং আলবার্টা উইলিয়ামস কিং-এর তিন সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তাঁর বড় বোনের নাম উইলি ক্রিস্টিন এবং ছোট ভাইয়ের নাম আলফ্রেড ডেনিয়েল উইলিয়ামস কিং। পাঁচ বছর বয়সে কিং পাবলিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৪১ সালের মে মাসে তাঁর পিতামহী জেনি মৃত্যুবরণ করেন যার কারণে কিং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। কারণ মৃত্যুকালে তিনি পিতামাতার কথা অগ্রাহ্য করে প্যারেড দেখতে গিয়েছিলেন। ছোট্ট কিং তখন বাড়ির জানালা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
কিং বুকার টি. ওয়াশিংটন হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৪৪ সালে ১৫ বছর বয়সে মোরহাউস কলেজ,আটলান্টাতে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে তিনি বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ফিলোসফি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৬৩ সালে ওয়াশিংটন অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচীতে তার ঐতিহাসিক ভাষণের শিরোনাম ছিল- ‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’।
কর্মজীবনের শুরুতে মার্টিন লুথার কিং, জুনিয়র মানবাধিকার কর্মী ছিলেন। নাগরিক অধিকার রক্ষাই তার উদ্দেশ্য ছিল। মহান এই নেতা ১৯৫৫ সালে মন্টেগমারিতে বাস বয়কটের নেতৃত্বদান করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য তহবিল গঠন করেন। ১৯৬২ সালে তিনি আলবেনিয়া ও জর্জিয়াতে ব্যারথ অভিযান চালান। ১৯৬৩ সালে তিনি ওয়াশিংটন মার্চ সুসংগঠিত করেন। তিনি একজন সফল বক্তা হিসেবে পরিচিত। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র তার খ্রিস্ট্রিয়মতানুসারে অহিংস উপায় নাগরিক অধিকার রক্ষায় অবদানের জন্য অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। সফল এই রাজনীতিবিদ তার মন্ত্রমুগ্ধকর বক্তৃতা দ্বারা জনমনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন।

১৯৬৪ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি তার অহিংস আন্দোলনের জন্য, বিশ্ব শান্তি রক্ষায়, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৮ সালের ৩ এপ্রিল মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। সহকর্মীরা তাকে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অকুতোভয় লুথার কিং তা অগ্রাহ্য করেন। সকলকে হিংসা ত্যাগের আহ্বান জানান।

পরদিন ৪ এপ্রিল লরেইন হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় জেমস আর্ল রে নামক শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থী যুবকের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এই নেতা, তখন তার বয়স মাত্র ৩৯ বছর।