রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে এই বড় খবরটি পান মাশরাফি

চ্যম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ অন্য কেউ হলে ভক্ত-সমর্থকদের উত্তেজনার পারদ এতোটা চড়ত না যতটা এখন আছে। তবে সেমিতে যাওয়ার হিসেবটা যে সহজ ছিল না- তা এখন প্রায় সবারই জানা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জেতার পরও নজর রাখতে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের ম্যাচের দিকে। সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডের জয়ই বাংলাদেশের সেমির টিকেট নিশ্চিত করে। তবে সেদিন এই খবরটা বাংলাদেশ অধিনায়ক জানতে পারেন রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে। সেই মুহূর্তটি নিয়ে লিখেছেন ভারতের আজকাল পত্রিকার সাংবাদিক দেবাশিস দত্ত। সোমবার ‘রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে মাশরাফি জানলেন…’ শিরোনামে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো-

ভাবতে পারেন, কার্ডিফে যে হোটেলে ছিল বাংলাদেশ, সেখানে টিভি ছিল, কিন্তু স্কাই টেলিভিশন চ্যানেল ছিল না!‌ তাই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিতে পারল কি না ইংল্যান্ড, তা জানার কোনো উপায় ছিল না মাশরাফিদের। অনেক বলে–কয়ে কোচ হাথুরুসিংহে তাদের টিম রুমে একটা টিভিতে ওই চ্যানেলে খেলা দেখার বন্দোবস্ত করেছিলেন। সেখানেই ঘুরেফিরে বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা দেখে যাচ্ছিলেন ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের গতিবিধি। দুর্দান্ত খেলে আগের রাতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দিলেও, সেমিফাইনালে পৌঁছনোর ভিসা জোগাড় করতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ার পরাজয়েই ছিল প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে পা রাখার পাসওয়ার্ড। তা পেয়ে যাওয়ায় পদ্মাপারের দেশে খুশির ঢেউ। কিন্তু সবাই মিলে একসাথে বসে অস্ট্রেলিয়ার পরাজয়ের প্রার্থনা করতে পারেননি সাকিবরা হোটেলে নিজেদের ঘরে টিভি না থাকায়। (‌একমাত্র আইসিসি–র

ক্রিকেট দেখার অ্যাপ আছে সাকিবের মোবাইলে। তাই সতীর্থরা মাঝেমধ্যেই সাকিবকে টেলিফোন করে জেনে নিচ্ছিলেন অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচের স্কোর।)‌

প্রশ্ন ছিল একটাই, ইংল্যান্ড কি জিতছে?‌

শেষ পর্যন্ত যখন স্বস্তির খবর এল, তখন অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা হাঁটতে বেরিয়েছিলেন হোটেলের সামনের রাস্তায়। কয়েক ঘণ্টা আগে স্ত্রী, পুত্র কার্ডিফ থেকে দেশের পথে রওনা হয়ে গিয়েছিলেন। আর নিউজিল্যান্ডকে হারানোর অন্যতম নায়ক মাহমুদু্ল্লাহ ছিলেন নিজের ঘরে। তার ঘরে টেলিফোন করে সেমিফাইনালে পৌঁছনোর খবর দিলেন সতীর্থরা। ঘরে ছিলেন তার স্ত্রী ও সন্তান। আগের রাতে দেরি করে ঘুমোতে গেলেও, সকালে ছুটতে হয়েছিল কনভেনিয়েন্স স্টোরে। সন্তানের ডায়াপার কেনার জন্য। আগের রাতে ১০৭ বলে অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন দেশকে সেমিফাইনালে তোলার জন্য। সকালে আরামের ঘুম ছেড়ে বেরোতে হয়েছিল নিজের প্রিয় সন্তানের জন্য!‌ দুটি আলাদা ভূমিকা। দেশসেবক এবং পিতা, দুই ভূমিকাতেই তাকে দায়িত্বশীল মনে হল। ‘‌এটুকু তো করতেই হয়।’‌ বলে জানালেন মাহমুদু্ল্লাহ।

যখন কথা হল, তখনও বাংলাদেশ সেমিফাইনালে পৌঁছয়নি, ‘‌নিজেদের পক্ষে যতটা করার ছিল, তা করেছি। এখন যদি সুযোগ আসে, তাহলে বুঝব, আগের রাতের লড়াইয়ের দাম পেলাম।’‌ গত দু–তিন বছরে বাংলাদেশ সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্য নিজেদের দারুণভাবে তৈরি করেছে। মনে হয়, এই উন্নতির ধারা বজায় রাখতে পারলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দুনিয়ায় এক বড় শক্তি হিসেবে চিহ্নিত হবে। বিশ্বকাপ জেতার দাবিদার হিসেবে নিজেদের তুলে ধরবে।

তা করার পথে কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পঞ্চম উইকেটে রেকর্ড তৈরি করে ফেলল মাহমুদু্ল্লাহ–সাকিব আল হাসান জুটি। ৪ উইকেটে ৩৩ থেকে জুটিতে ২২৪ রান তোলা সহজ ব্যাপার?‌ হাঁটু কাঁপেনি, অসীম সাহস নিয়ে লড়ে গিয়েছিলেন ওরা, ‘‌শুরুর দিকে কিউই বোলাররা, বিশেষ করে, টিম সাউদি খুব ভাল জায়গায় বল রাখছিল। আমি এবং সাকিব শুরুতে নিজেদের উইকেট বাঁচানোর দিকে নজর দিয়েছিলাম। থিতু হওয়ার পর, আমি এগিয়ে গিয়ে সাকিবকে বলেছিলাম, ‘‌মনে হচ্ছে হয়ে যাবে। তবে, উইকেটে থাকতে হবে।’‌
কথা রেখেছেন দু’‌জনেই। জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে সাকিব যখন আউট হলেন, তখন জয়ের মঞ্চ ছিল কয়েক হাত দূরে। ১১৫ বলে ১১৪ রানের ইনিংসের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, তাড়াহুড়ো করতে চাননি সাকিব। মাহমুদু্ল্লাহও নয়, ১০৭ বলে ১০২ রান করেছিলেন। ‘‌খুব বেশি ভাবিনি আমরা। লক্ষ্য ছিল, উইকেট যেন ছুঁড়ে না দিই। ক্রমশ দেখলাম, আমরা এগোচ্ছি। ধীরে ধীরে বাড়ছিল আত্মবিশ্বাস।’‌

মেনে নিলেন, এটাও তার অন্যতম সেরা ইনিংস, ‘‌দল চাপে ছিল। আমরা প্রথম একটি বিশ্বমানের প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠলাম। এ কারণেই সেরা ইনিংসগুলোর তালিকায় থাকবে এই অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংসটাও।’‌ অবিশ্বাস্য!‌ এতে কোনো সন্দেহ নেই। ঝলমলে উদ্যোগ। ‘‌সবচেয়ে বড় কথা আমরা এই বিশ্বমানের প্রতিযোগিতায় বেঁচে থাকলাম।’‌ এই নিয়ে আইসিসি আয়োজিত প্রতিযোগিতায় তৃতীয় শতরান পেলেন। সাকিব আগে পাননি। এই প্রথম। এমন সময়ে পেলেন যা এই জুটির উদ্যোগকে মাথায় করে রাখবে বাংলাদেশ। এভাবেই পরের প্রজন্ম সাকিব–মাহমুদু্ল্লাহর তৈরি করা ব্যাটন হাতে নিয়ে দৌড়ে এক বিশাল ক্রিকেটশক্তির দেশ হয়ে উঠবে। বাংলাদেশকে ছোট করে দেখবেন না, প্লিজ।‌‌‌‌