রেলের ১৭০টি বগি ও ইঞ্জিন ক্রয়সহ ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন

বাংলাদেশ রেলওয়ের ১৭০টি বগি ও ইঞ্জিন ক্রয়সহ ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১১ হাজার ৮২৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৩০০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৩ হাজার ৮৩৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব মফিজুল ইসলাম।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৮৬টি মিটার গেজ ও ৯৬টি ব্রড গেজসহ মোট ২৮২টি লোকোমোটিভ রয়েছে। মেকানিক্যাল কোড ও ডিজাইন স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী লোকোমোটিভগুলোর অর্থনৈতিক মেয়াদ ২০ বছর। যার মধ্যে ১৬৮টি লোকোমোটিভের বয়স ৩০ বছর অতিক্রম করেছে। এছাড়া রেলওয়েতে ১ হাজার ১৬৫টি যাত্রীবাহী মিটার গেজ ক্যারেজ রয়েছে। মেকানিক্যাল কোড ও ডিজাইন স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী যাত্রীবাহী ক্যারেজের অর্থনৈতিক মেয়াদ ৩৫ বছর। যার মধ্যে ৪৫৬টি যাত্রীবাহী কোচের বয়স ৩৫ বছর অতিক্রম করেছে, ১৩৫টির মেয়াদ ৩১ থেকে ৩৪ বছর। যাত্রী চাহিদার কারণে মেরামতের মাধ্যমে মেয়াদ উত্তীর্ণ যাত্রীবাহী কোচগুলো ব্যবহার করা হলেও তা আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন আরামদায়ক ও নিরাপদ নয়।

মন্ত্রী জানান, এখন থেকে নতুন রাস্তা তৈরির চেয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলোকে আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাছাড়া রাস্তা মেরামত বা সংস্কারের সময় মান বজায় রাখতে এলজিইডিকে দায়িত্ব দিয়েছেন। রাস্তার দেখভাল ও যেসব স্থান দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে সেসব স্থানে পাইপ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ অঞ্চল পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ১৮৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। রংপুর বিভাগ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮৮৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। রাজশাহী বিভাগ (সিরাজগঞ্জ জেলা ব্যতীত) পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। কৃষি তথ্য সার্ভিস আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিদ্যমান পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৬১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৪টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। শিশু ও নারী উন্নয়নে সচেতনমূলক যোগাযোগ কার্যক্রম প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। চক্ষু স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও অন্ধত্ব দূরীকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেক্ট্রিক লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৯৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং ব্রিজসমূহের উন্নয়নসহ আধুনিক যান যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও সড়ক আলোকায়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ত্রিশাল-বালিপাড়া-নান্দাইল জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতীকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। মিরসরাই ১৫০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিরতা, ময়মনসিংহ ও কালকিনি, মাদারীপুর ইসলামিক মিশন হাসপাতাল কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ এবং বায়তুল মোকাররম ডায়াগনস্টিক সেন্টার শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা।