রোজিনা ইসলামকে ঘষেটি বেগমের সাথে তুলনা রাষ্ট্রপক্ষের

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন শুনানি চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাকে ষড়যন্ত্রকারী ঘষেটি বেগমের সঙ্গে তুলনা করেন। তবে একজন আইনজীবী হিসেবে এমন শব্দ ব্যবহার করা শোভনীয় নয় মন্তব্য করে এর প্রতিবাদ জানান রোজিনার আইনজীবী।

রোজিনা ইসলামের জামিন শুনানি শুরু হয় নির্ধারিত সময়েরও দুই ঘণ্টা পর। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ভার্চু্য়াল শুনানির সময় নির্ধারিত থাকলেও, ইন্টারনেট সংযোগের ত্রুটির কারণে দুপুর ১টায় শুরু হয় শুনানি।

সচিবালয়ে সোমবার এক কর্মকর্তার কক্ষে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ রাখার পর রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী। মামলায় রোজিনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নথি চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার শুনানি চলাকালে রোজিনার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী জামিনের আবেদনের পক্ষে তার যুক্তি তুলে ধরেন। বলেন, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে কথিত চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে।

সেই অভিযোগের এজাহারে পেনাল কোডের ৩৭৯ ও ৪১১ ধারা এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩-এর ৩ ও ৫ ধারার কোনো উপাদান নেই।

তিনি বলেন, ৩৭৯ ও ৪১১ ধারা সংযুক্ত করতে হলে অবশ্যই কী কী চুরি হয়েছে তার সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকতে হবে। কিন্তু সেই বর্ণনা এজাহারের কোথাও নেই। অর্থাৎ রোজিনা কী ডকুমেন্ট চুরি করেছিলেন সেটার উল্লেখ নেই। সেই সাথে জব্দ তালিকা দেয়া আছে, সেটা পুলিশ রোজিনার কাছ থেকে উদ্ধার করেনি, বরং একজন সরকারি কর্মকর্তা সেগুলো পুলিশের কাছে উপস্থাপন করেছেন।

‘তাই কথিত চুরি করা ডকুমেন্ট রোজিনার কাছ থেকে উদ্ধার করেছেন কি না কিংবা তিনি আসলেই চুরি করেছেন কি না সে নিয়ে আইনি প্রশ্ন থেকে যায়। তা ছাড়া অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ধারা হলো গুপ্তচরবৃত্তি সংক্রান্ত। রোজিনা গুপ্তচারিতা করছিলেন এজাহারে কোথাও এমনটি উল্লেখ নেই।

‘আর ৫ ধারা হলো রাষ্ট্রীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শত্রুর কাছে হস্তান্তর করতে যোগাযোগ করা। এমন কোনো তথ্যও এজাহারে নাই।’

আইনজীবী সমাজী বলেন, ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের সেকশন ১২ মতে আইনের ৩ ধারা ছাড়া অন্য সব ধারায় অপরাধ জামিনযোগ্য। এই রেফারেন্সে আমরা রোজিনার জামিন চেয়েছি। আমি বিজ্ঞ আদালতকে বলেছি, এই ঘটনায় রোজিনার জামিন পাওয়া তার প্রতি কোনো দয়া নয় বরং তার আইনি অধিকার। সি ডিজার্ভস টু বি রিলিজড অন বেইল।’

সেই সঙ্গে রোজিনার আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘রোজিনা একজন নারী ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই তার জামিন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়া হোক। আসামির বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কোভিডের এমন মহামারির সময়ে রোজিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এমন ষড়যন্ত্রের মুখে পড়েছেন।’

আসামিপক্ষের আইনজীবীর এই যুক্তির বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দীন খান হিরণ রোজিনাকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার খালা ঘষেটি বেগমের সঙ্গে তুলনা করেন।

তিনি আদালতকে বলেন, ‘ঘষেটি বেগমও নারী ছিলেন। কিন্তু ষড়ষন্ত্রকারী রোজিনাও তাই। সেজন্য নারী হওয়ায় তিনি জামিনের বিশেষ সুবিধা পেতে পারেন না।’

শুনানি শেষে সাংবাদিকরা আইনজীবী হিরণকে তার মন্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আসামিপক্ষের আইনজীবীও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে অনেক কটূক্তি করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমিও এই মন্তব্য করেছি।’

অন্যদিকে রোজিনার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি অভিযোগ করে বলেন, ‘একজন আইনজীবী হিসেবে এই শব্দ ব্যবহার করা শোভনীয় নয়। আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যের পর আমি এমন শব্দ ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়েছি।

‘তিনি আইনের বাইরে গিয়ে তার ব্যক্তিগত অভিমত থেকে এমন শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা তিনি কোনোভাবেই পারেন না।’