শ্রম অধিকার, মজুরিসহ নানা প্রশ্ন বাংলাদেশকে

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি করা বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশের শুনানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন (ইউএসআইটিসি)। চার ঘণ্টার শুনানিতে শ্রম অধিকার, শ্রম আইন, শ্রমিকদের দক্ষতা, মজুরিসহ নানা বিষয়ে জানতে চান কমিশনাররা। বিজিএমইএর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

মার্কিন সরকারের আরেক সংস্থা বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের (ইউএসটিআর) অনুরোধে বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশ নিয়ে অনুসন্ধান করছে ইউএসআইটিসি।কিভাবে এ দেশগুলো মার্কিন পোশাকশিল্প বাজারের এত বড় অংশ দখল করে রেখেছে, তা খতিয়ে দেখবে কমিশন। দেশগুলোর কেউ অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাজার দখল করছে কি না, তা খুঁজে বের করাই কমিশনের প্রধান উদ্দেশ্য। অন্য চারটি দেশ হলো ভারত, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান।

ইউএসআইটিসির চেয়ারম্যান ডেভিড জোহানসন ও তাঁর তিন সহকর্মী বাংলাদেশে শ্রম অধিকার, শ্রম আইন, শ্রমিকদের উৎপাদনের তুলনামূলক দক্ষতা, মজুরিসহ নানা বিষয়ে জানতে চান।

শুনানিতে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ প্রথম লিখিতভাবে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে। পরে কমিশনের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়। বাংলাদেশের পক্ষে বেশির ভাগ প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। শুনানিতে ২৪ মার্চ পর্যন্ত লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ থাকবে।

আগামী ৩০ আগস্ট কমিশন তাদের তদন্ত প্রতিবেদন ইউএসটিআরের কাছে উপস্থাপন করবে।

শুনানির শুরুতে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বাংলাদেশে গত ১০ বছরে তিন দফায় শ্রমিকদের মজুরি অন্তত ৩১৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে পোশাকশিল্পের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে উৎপাদনের খরচও অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ শুধু পণ্যের তুলনামূলক কম মূল্যের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে আছে তা নয়, বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সরকার তা থেকে নানাভাবে উত্তরণের চেষ্টা করছে।

বাণিজ্যসচিবের পর বিজিএমইএ সভাপতি লিখিত বক্তব্য দেন।এরপর তাঁদের দুজনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে খুঁটিনাটি সব বিষয়ে প্রশ্ন করেন ইউএসআইটিসির তিন কমিশনার রন্ডা শ্মিডলাইন, জেসন কেয়ার্নস ও এমি কারপেল। তাঁরা শ্রমিকদের মজুরি, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার, কাজের পরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা, জীবন বীমা ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে জানতে চান। তাঁদের বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তর দেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
ইউএসআইটিসির একজন কমিশনার বাংলাদেশের কর্মীদের গড় কাজের দক্ষতা ও উৎপাদনক্ষমতা কম্বোডিয়ার চেয়ে বেশি কি না, জানতে চান। বাংলাদেশের কর্মীরা কম্বোডিয়ার চেয়ে কম মজুরি পাওয়ার পরও বেশি পণ্য উৎপাদনে সক্ষম কি না—এমন প্রশ্নও করেন। এ সময় ফারুক হাসান বলেন, ‘কম্বোডিয়ার তুলনায় বাংলাদেশের কর্মীদের কর্মদক্ষতা বেশি কি না, সেটা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের মালিকরা গত ২০ বছরে আধুনিক যন্ত্রের পেছনে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন। এখানে সর্বাধুনিক যন্ত্রে কাজ হয়। বাংলাদেশের কর্মীদের কায়িক শ্রমের পরিমাণ একেবারেই ন্যূনতম। তবে কর্মীদের উৎপাদনের দক্ষতা চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার তুলনায় কম।