‘সংকট উত্তরণে’ যুক্তফ্রন্ট নেতাদের নেতৃত্বে চান ফখরুল

‘সংকট’ উত্তরণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে তৃতীয় শক্তি হিসেবে গড়ে উঠার ঘোষণা দেয়া যুক্তফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি। যুক্তফ্রন্ট নেতাদেরকে ‘লড়াইয়ে’ নেতৃত্ব দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

দলের পক্ষ থেকে রাজনীতিবীদদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

যুক্তফ্রন্ট নেতাদের ফখরুল বলেন, ‘জাতির এই দুঃসময়ে জাতীয় নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন এবং জাতিকে এই সংকট উত্তরণে নেতৃত্ব দেবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা মনে করি এই সংকট উত্তরণে জাতীয় ঐক্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন।’

ইফতারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এর বাইরে ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রণ জানায় বিএনপি।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বাইরে অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তফ্রন্টের শরিক বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দীকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদর রহমান মান্না। আর লন্ডনে অবস্থান করায় ইফতারে অংশ নিতে পারেননি গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন।

গত বছরের মাঝামাঝি সময় এই পাঁচ রাজনীতিক জোট গঠনের উদ্যোগ নেন। আর গত ডিসেম্বরের শুরুর দিকে কামাল হোসেনকে বাইরে রেখে জোটের ঘোষণা দেন বাকি চার নেতা। নাম দেয়া হয় যুক্তফ্রন্ট।

সে সময় মান্না ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দুই জোটের বিপরীতে নতুন একটা রাজনীতিক জোট গড়ার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ছিল আমাদের। সাধারণ মানুষও সেটা চাইছে। আমরা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পুরণে পথ চলা শুরু করেছি। আমরা মানুষের কাছে যাব। আশা করছি দুই রাজনৈতিক জোটের বাইরে বৃহৎ শক্তি নিয়ে আমরা রাজনীতিতে আবির্ভূত হতে পারব।’

যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা আর মান্না ও কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ত ছিলেন।

১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার দুই বছর পর কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ ছেড়ে নতুন দল গঠন করেন। আর মান্না সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায় সরকারের আমলে দলে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত হন আর পরে দল থেকে বহিষ্কৃত হন।

অন্যদিকে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি বানায় বিএনপি। পরে তাকে এই ছাড়তে বাধ্যও করা হয়। আর সে সময় আলাদা দল গঠন করার পর তার ওপর হামলাও হয় প্রকাশ্যে।

যুক্তফ্রন্ট নেতাদেরকে ফখরুল বলেন, ‘যারা আজকে উপস্থিত হয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে আসুন দেশের প্রয়োজনে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের অধিকার আদায় করি এবং দেশের মানুষের যে অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রতিবছর এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এর কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন আমাদের দলের চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু আজকে তিনি আমাদের মাঝে উপস্থিত নেই। তাকে এই সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে ইফতার করতে হচ্ছে।’

‘আমরা সবাই আজকে ভারাক্রান্ত। জাতির এই সংকটময় মূহূর্তে যে নেত্রী আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করেছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই নেত্রীর অবর্তমানে আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদের আমি অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’

ইফতারের আগে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনার পাশাপাশি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে মোনাজাত করা হয়।

এ সময় মঞ্চে বিএনপি ও জোটের শীর্ষ নেতারা ছাড়াও বদরুদ্দোজা চৌধুরী উপবিষ্ট ছিলেন। তবে জামায়াতের প্রতিনিধি মঞ্চে থাকায় কাদের সিদ্দিকী নীচে বসেই ইফতার করেন।

ফাঁকা ছিল ‘খালেদার চেয়ার’

খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলেও মূল মঞ্চের ঠিক মাঝখানে তার জন্য চেয়ার রাখা ছিল। সেটা পুরো সময় ফাঁকা ছিলো।

নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার প্রতি সম্মান জানিয়ে চেয়ারটি রাখা হয়েছে।

ইফতারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মাহবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মোহাম্মাদ শাজাহান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, শাজাহান ওমন, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুব উদ্দীন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ, শিরিন সুলতানা, শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ইফতারে অংশ নিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক জামায়াত ইসলামীর নায়েবে আমীর মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল হালীম, নুরুল ইসলাম বুলবুল, সেলিম উদ্দীন, জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জালাল হায়দার, ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, খেলাফত মজলিসের মুজিবুর রহমান, মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের, কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান, এনপিপির একাংশের চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসা, জাগপার সভাপতি রেহেনা প্রধান, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ) চেয়ারম্যান আবদুর রকিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সভাপতি মুফতী মুহম্মদ ওয়াক্কাস, পিপলস লীগ মহাসচিব সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ডেমোক্রেটির লিগ সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী, ন্যাপ ভাসানীর সভাপতি আজহারুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের একাংশের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ, ইসলামিক পার্টির সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী প্রমুখ।