সমালোচনাতেও থামছে না আর্জেন্টিনা, ইসরাইলের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলবেই

সমালোচনা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিদের গুপ্তহত্যায় ব্যবহৃত স্টেডিয়ামে ইসরাইলের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলতে অটল রয়েছে আর্জেন্টিনা। টেড্ডি নামে ওই স্টেডিয়ামে আগামী ৯ জুন ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে।

ম্যাচটি নিয়ে ইসরাইলের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রচণ্ড উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। এরই মধ্যে ম্যাচটির সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পাওয়া লিআন এজেন্সি জানিয়েছে, ২০ হাজার টিকিটের বিপরীতে অনলাইনে এক লাখ আবেদন জমা পড়েছে।

তবে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে খেলতে রাজি হওয়ায় বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সমর্থকের সমালোচনার মুখে পড়েছে দুবারের বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা।

এর বড় কারণ হল আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা যেই টেড্ডি স্টেডিয়ামে প্রীতি ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন তাকে ব্যবহার করে গাজা উপত্যকায় নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের গুপ্তহত্যা করত ইসরাইলি স্নাইপাররা।

রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবল শুরুর মাত্র সপ্তাহখানেক আগে স্টেডিয়ামটিতে প্রীতি ম্যাচ খেলতে রাজি হওয়া থেকে বিরত থাকতে অনেকেই লিওনেল মেসির নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনা দলকে আহ্বান জানিয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যার দায়ে ইসরাইলের বিরোধী বিখ্যাত বর্জন-পরিত্যাগ-নিষেধাজ্ঞা আন্দোলন (বিডিএস) এই ম্যাচ বন্ধের জন্য প্রচার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘হ্যাশট্যাগ আর্জেন্টিনা নো ভয়াস’ শিরোনামে এ প্রীতি ম্যাচের বিরুদ্ধে প্রচারকাজ চলছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও এতে সংহতি জানিয়েছে।

আর্জেন্টিনা যাতে নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের হত্যায় কলঙ্কিত অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে ফুটবল না খেলে সেই অনুরোধ জানিয়ে দেশটির বিভিন্ন ক্রীড়া ব্যক্তির কাছে চিঠি দিয়েছে বিডিএস।

আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে দেয়া এক চিঠিতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে গঠিত আর্জেন্টাইন নাগরিকদের কমিটি বলেছে, যদি তারা এই ম্যাচ বয়কট করে, তবে ইসরাইলের বর্ণবাদ, গণহত্যা ও নিপীড়নের শিকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি আর্জেন্টিনার নাগরিকদের সংহতির প্রতি সম্মান জানানো হবে।

ইসরাইলে যেতে উদগ্রিব লিওনেল মেসি বলেন, সত্যিকার অর্থে আমি পবিত্র ভূমিতে ভ্রমণ করতে চাই। আর্জেন্টিনার জন্য এটা তাৎপর্যপূর্ণ পেশাগত ও আধ্যাত্মিক যাত্রা হবে। আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বকাপের আগে এই প্রীতি ম্যাচ আমাদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে।

২০১৩ সালের আগস্টে বার্সেলোনা ফুটবল দলের সঙ্গে ইসরাইলে শান্তির সফরে গিয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের ৫ জুন বিডিএসের আহ্বান সাড়া দিয়ে নিউজিল্যান্ডের ২১ বছর বয়সী সংগীতশিল্পী ও গীতিকার লর্ড তেলআবিবে তার কনসার্ট বাতিল করেছিলেন। যদিও তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিডিএস আন্দোলনকে সমর্থন করেন না।

এর আগে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের আগে ইসরাইলে ফুটবল খেলতে গিয়েছিল আর্জেন্টিনার ফুটবল দল। পরে ১৯৯০, ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ সালেও ইহুদিবাদী দেশটির দলের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলেন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা।

বিডিএস আন্দোলন দাবি করেছে, বর্ণবাদ ও দখলদারদের সঙ্গে কোনো প্রীতি ম্যাচ হতে পারে না।

ইসরাইল যতদিন পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করে, ততদিন তাদের সঙ্গে খেলায় অংশগ্রহণ না করতে আহ্বান জানায় তারা। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর জেরুজালেমের অধিকাংশ ভূখণ্ড দখল করে নিয়ে যায় ইসরাইল।

এমনকি অখণ্ড জেরুজালেম নিজেদের রাজধানী দাবি করছে ইসরাইল। আর ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে নিজেদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গঠন করতে চায়।

এদিকে গত ৩০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ফিলিস্তিনিদের নিজেদের বসতবাড়িতে ফেরার বিক্ষোভে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি স্নাইপারদের গুলিতে ১২৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন হাজার হাজার।

১৯৪৮ সালে ইহুদি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় সাড়ে সাত লাখ আরব অধিবাসী নিজেদের ভিটেমাটি থেকে বিতাড়িত হন। পার্শ্ববর্তী আরব দেশ, অধিকৃত পশ্চিমতীর ও অবরুদ্ধ গাজা- এসব আরবরা শরণার্থী হিসেবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

চলতি মাসের ১৪ তারিখে ইসরাইলে মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ফিলিস্তিনিরা। এদিন ইসরাইলি স্নাইপাররা ৬২ নিরপরাধ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। এতে এখন পর্যন্ত কোনো ইসরাইলি সেনা হতাহত হয়নি।

গত ১২ বছর ধরে গাজা উপত্যকা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরাইল। সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে ওষুধসামগ্রী প্রবেশেও বিধিনিষেধ আরোপ করে রাখা হয়েছে।