সাজেকে ইউপিডিএফ’র বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

পার্বত্য চট্টগ্রামে বেদখলকৃত ভূমি ফেরতদান, সেটলারদের সমতলে পুনর্বাসন, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুুদের নিজ জমিতে পূনর্বাসন ও ক্ষতিপুরণ প্রদান এবং ভূমি বেদখল বন্ধের দাবিতে সাজেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

সোমবার (১০ অক্টোবর) সকাল ১০টার সময় ইউপিডিএফের বাঘাইছড়ি ইউনিটের উদ্যোগে সাজেক ইউনিয়নের ৪নং ওর্য়াডের দ্বপদা নামক স্থানে সাজেকের মূল সড়কে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের আগে বিভিন্ন দাবির ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে মুহুমুর্হু শ্লোগান দিয়ে এলাকার দুই সহস্রাধিক নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী সমাবেশ স্থলে এসে সমবেত হন।

সমাবেশে ইউপিডিএফ’র সাজেক ইউনিটের অন্যতম সংগঠক আসেন্টু চাকমা’র সভাপতিত্বে ও ইউপিডিএফ সদস্য সুমন চাকমা’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাজেক থানা শাখার সভাপতি কালো বরণ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিউটন চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রূপসী চাকমা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের বিতাড়িত করতে ভূমি বেদখলকে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও ভূমি বেদখল হচ্ছে। বান্দরবানের লামায় ভূমিদস্যু রাবার কোম্পানিকে ব্যবহার করে সেখানকার ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০একর জুমভূমি জবরদখলের চেষ্টা চলছে। এছাড়া কথিত উন্নয়ন, পর্যটন, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনসহ নানা উপায়ে বিভিন্ন জায়গায় ভূমি বেদখলের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০বছর পেরিয়ে গেলেও এ অঞ্চলের পাহাড়ি জনগণ এখনো নিপীড়ন-নির্যাতন ও উচ্ছেদের শিকার হচ্ছেন। ১৯৯৭সালে পার্বত্য চুক্তির পর এই ভূমি বেদখলের মাত্রা আরো ব্যাপক আকার নিয়েছে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে ইউপিডিএফ সংগঠক আসেন্টু চাকমা বলেন, আজকে এই সাজেকে পর্যটনের নামে যেমন পাহাড়িদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, একইভাবে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের নামে চলছে পাহাড়িদের বিতাড়নের পাঁয়তারা। পাহাড়ি অধ্যুষিত এই সাজেকের মানুষের জন্য যেখানে দরকার শিক্ষক-চিকিৎসার সুবিধা, সেখানে মসজিদ নির্মাণ করে ইসলামীকরণ নীতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, শাসকগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধু ভূমি বেদখল নয়, সমানতালে অন্যায় দমন-পীড়ন, নারী নির্যাতন, খুন-গুমসহ নানা মানবাধিকার লক্সঘন অব্যাহত রেখেছে। কল্পনা চাকমা অপহরণ থেকে শুরু করে এ যাবত অসংখ্য পাহাড়ি নারী ধর্ষণ, খুন, নির্যাতনের শিকার হলেও এসব ঘটনার কোন বিচার হয়নি।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি ও অস্তিত্ব রক্ষায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান। সমাবেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত বেদখলকৃত সকল ভূমি ফিরিয়ে দেওয়া, সেটলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে পুনর্বাসন করা, ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তুুদের নিজ জমিতে ক্ষতিপূরণসহ যথাযথ পুনর্বাসন, পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতি ও ভূমি বেদখল বন্ধ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমাসহ মেম্বার, কার্বারী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। সমাবেশ শেষে বাঘাইহাট জোনের ডিজিএফআই’র সদস্য মো: নাদিম ও মো: রনির নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্য লাঠিসোটা নিয়ে সমাবেশ স্থলে এসে সমাবেশে অংশগ্রহনকারীদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। এ সময় তারা সমাবেশে অংশগ্রহণকারী দুইজনকে মারধর ও আটকের চেষ্টা করলে হাজারো জনতার প্রতিরোধের মুখে তারা সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।