সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার বিচার ফের শুরু

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেড় যুগ আগে বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকাকালে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় করা হত্যাচেষ্টা মামলার বিচার আবারো শুরু হয়েছে।

উচ্চ আদালতের আদেশে সাতক্ষীরা মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক হুমায়ুন কবীরের আদালতে বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে ফের মামলাটির কাজ শুরু করছেন বুধবার।

২০০২ সালের ৩০ অগাস্ট শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনে তিনটি মামলা হয়।

কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তখনকার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দীন বাদী হয়ে উপজেলা যুবদলের সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৭০ থেকে ৭৫ জনকে আসামি করে আদালতে হত্যাচেষ্টা মামলাটি করেন। থানা এ মামলা না নেওয়ায় সে সময় আদালতে মামলাটি করেছিলেন তিনি।

এক যুগ পর আদালতের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর কলারোয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।

২০১৫ সালের ১৭ মে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০ জনকে সাক্ষী করে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেখ সফিকুর ইসলাম।

মামলাটির ৯জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর এ মামলার আসামি রাকিব ঘটনার সময় তার বয়স দশ বছর ছিল দাবি করে উচ্চ আদালতে মামলা বাতিলের আবেদন করেন।

সেই আবেদনে ২০১৭ সালের ২৩ অগাস্ট উচ্চ আদালত মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেয়। সেই সঙ্গে মামলা বাতিল প্রশ্নে রুল জারি করে।

মামলাটি এরপর সেভাবেই পড়ে ছিল। বিষয়টি জানার পর সম্প্রতি এ সংক্রান্ত রুল শুনানির উদ্যোগ নেন অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল এস এম মুনীর।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর মামলা বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর উচ্চ আদালতে শুনানি শুরু হয়। কয়েক দফা শুনানির পর ৮ অক্টোবর মামলাটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ৯০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার জন্য জেলার আদালতকে আদেশ দেয় উচ্চ আদালত।

সাতক্ষীরা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) আব্দুল লতিফ বলেন, “এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মহল বিশেষ নানান ষড়যন্ত্র করছে।”

তবে মামলার সব সাক্ষীকে যথা সময়ে আদালতে উপস্থিত করে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

কী ঘটেছিল

ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে ২০০২ সালের ৩০ অগাস্ট সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

সড়ক পথে ঢাকায় ফেরার সময় কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়ি বহরে হামলা হয়। বোমা বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়া হয়।

শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাসহ স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা সেদিন আহত হন। ওই ঘটনায় কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন কলারোয়া থানায় মামলা করতে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

এক যুগ পর ২০১৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা আদালতে নালিশি অভিযোগ করেন কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেয়।