সাড়ে সাতশ’ কোটি টাকার ৭ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

৪০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস ওয়েল ও মোট একলাখ ২০ হাজার টন বিভিন্ন ধরনের সার ক্রয়সহ ৭ টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৭৫১ কোটি ৭৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।

বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো.সামসুল আরেফিন।

সভা শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, আজ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য ১টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ৮টি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৪টি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ১টি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ১টি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ১টি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের ১টি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ৭ প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৭৫১ কোটি ৭৪ লাখ ৬৭৭ হাজার ১২৯ টাকা। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে ৪র্থ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাতার এর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে প্রতি মে.টন ৪৫১.৬৭ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩০ হাজার মে.টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫০ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৫ কোটি ৫৮ লাখ ২৩ হাজার ৫৩০ টাকা।

সভায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ এর কাছ থেকে ৫ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৪৬৬ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ১ কোটি ৩৯ লক্ষ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় হবে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৯ কোটি ১৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন,২০২১-২০২২ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে ৫ম লটে ৩০ হাজার মে. টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরব থেকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে ৫ লাখ মে.টন ইউরিয়া সার আমদানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী সারের দাম নির্ধারণ করে ৫ম লটে ৩০ হাজার মে.টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মে.টন ৪৫১.৬৭ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট এক কোটি ৩৫ লাখ ৫০ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ১১৫ কোটি ৫৮ লাখ ২৩ হাজার ৫৩০ টাকা।

সভায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে ৬ষ্ঠ লটে ৩০ হাজার মে.টন (১০%+) বাল্ক প্রিল্ড ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সৌদি আরবের সাবিক এর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের দাম নির্ধারণ করে ৬ষ্ঠ লটে ৩০ হাজার মে.টন (১০%+) বাল্ক প্রিল্ড ইউরিয়া সারের প্রতি মে.টনের দাম পড়বে ৪৪৬.৬৭ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে এক কোটি ৩৪ লাাখ ১০০ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১১৪ কোটি ৩০ লক্ষ ২৮ হাজার ৫৩০ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব সাংবাদিকদের বলেন, জি-টু-জি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের জন্য ৪০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) ফার্নেস অয়েল (এইচএফও) আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) মেয়াদী চুক্তির আওতায় জি-টু-জি ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের ৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত¡ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করে আসছে। বিউবো’র চাহিদার প্রেক্ষিতে বিপিসি কর্তৃক ৪০ হাজার মে.টন ফার্নেস অয়েল আমদানির জন্য জি-টু-জি সরবরাহকারী চুক্তিবদ্ধ ৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছে কোটেশন আহ্বান করা হলে ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। তার মধ্যে ২টি দরপ্রস্তাব রেসপনসিভ হয়। প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে পিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ইন্দোনেশিয়ার পিটি.বুমি শিয়াক পুসাকু জাপিন-এর কাছ থেকে ৪০ হাজার মে.টন হাই সালফার ফার্নেস অয়েল আমদানি করা হবে। এতে ব্যয় হবে দুই কোটি ৪ লাখ ৩৪ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৭৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েলের দাম ৪৬৫.৯৭ মার্কিন ডলার।

সভায় চট্রগ্রামের ‘কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট থেকে বাকলিয়া চর পর্যন্ত বর্জ্য অপসারণ এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি’ প্রকল্পের অতিরিক্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর তারিখের সিসিজিপি সভার অনুমোদনক্রমে প্রকল্প এলাকার বর্জ্য অপসারণ এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য ৪২ লাখ ৮০ হাজার ঘনমিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং পরবর্তী ৩ বছর ১৪ লাখ ৭০ হাজার ঘনমিটার সংরক্ষণ ড্রেজিং- এর কাজ সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ২৪২ কোটি টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু ড্রেজিং পরিচালনার সময় প্রকল্প এলাকায় ধারণার অতিরিক্ত ৭ লাখ ৭০ হাজার ৪০১ ঘনমিটার অপচনশীল দ্রব্যাদি মিশ্রিত থাকায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৫৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

তিনি বলেন,কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।প্রকল্পের কাজের বাস্তবায়ন তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের লক্ষ্যে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ৪টি প্রতিষ্ঠানের কাছে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল ইস্যু করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠানই দরপ্রস্তাব দাখিল করে। তার মধ্যে ২টি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হয়। প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক নেগোসিয়েশন করে সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী দরদাতা প্রতিষ্ঠান কোরিয়া ভিত্তিক যৌথ কোম্পানি ১.উজো এবং ২.সানজিন-কে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করে। কমিটি তাতে সম্মতি দিয়েছে। এ জন্য ব্যয় হবে ৫৯ কোটি ৩৬ লাখ ৯৬ হাজার ৫৩৯ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব জানান, সভায় ‘রাজশাহী ওয়াসা ভূ’-উপরিস্থিত পানি শোধনাগার’ প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব ফেরত পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটিতে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে। পরে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য আসবে।

এরআগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় রাশিয়া থেকে জি-টু-জি ভিত্তিতে এক লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।