স্ত্রী মোবাইল ফোনে কার সঙ্গে কথা বলেন, কোথায় যান- এনিয়ে সন্দেহ।। অতঃপর ঝগড়া, হত্যা

দাম্পত্য কলহের সূত্র ধরেই অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুকে খুন করা হয়। এ খুনের মামলায় গ্রেফতার শিশুর স্বামী সাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তার বন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। খুনের কথা তাদের স্বীকারোক্তিতে উঠে এসেছে।

সাখাওয়াত আলীম নোবেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, মোবাইল ফোনে কার সঙ্গে কথা বলেন বা কোথায় যান এসব নিয়ে প্রতিনিয়ত সন্দেহ করতেন তিনি। ঘটনার দিন সকালে হঠাৎ স্ত্রীর ফোন দেখতে চান তিনি। এ নিয়েই ঝগড়া-হাতাহাতি থেকে শেষ পর্যন্ত গলা চেপে ধরলে মারা যান শিমু।

নোবেল ও তার বন্ধুর তিন দিনের রিমান্ডের প্রথম দিন শেষে আদালতে জবানবন্দি দেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার দুইজন বিচারিক হাকিমের আলাদা খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। নোবেলের স্বীকারোক্তি নেন বিচারিক হাকিম মো. সাইফুল ইসলাম ও তার বন্ধু ফরহাদের জবানবন্দি নেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মিশকাত সুকরানা।
ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্ত্রী মোবাইল ফোনে কার সঙ্গে কথা বলেন বা কোথায় যান, এসব নিয়ে প্রতিনিয়ত সন্দেহ করতেন নোবেল। গত ১৬ জানুয়ারি সকালে শিমুর মোবাইলে কল আসে। তখন কে কল করল তা দেখতে চান নোবেল, এতে বাধা দেন শিমু। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে ঝগড়া হয়, যা একপর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। একপর্যায়ে শিমুর গলা চেপে ধরলে তিনি মারা যান।

হত্যাকাণ্ডে ছিলেন বন্ধু ফরহাদও

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও রিমান্ডের প্রথম দিন নোবেল দাবি করেন, তিনি একাই শ্বাসরোধ করে স্ত্রীকে হত্যা করেন। পরে লাশ গুম করতে বাল্যবন্ধু ফরহাদকে ডেকে নেন। ফরহাদ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন, হত্যার আগে তিনি কিছুই জানতেন না। বন্ধুর ফোনে সাড়া দিয়ে হত্যাকাণ্ডের পর ওই বাসায় যান তিনি। তবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, নোবেল একা নয়, হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ফরহাদ। দুই বন্ধু মিলেই শিমুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

সূত্র জানায়, ওই দিন সকালে নোবেলের বাসায় যান ফরহাদ। ফরহাদ যাওয়ার পর বাসার দরজাও খুলে দেন শিমু। এরপর তারা ডাইনিং টেবিলে বসে চা পান করেন। কিছুক্ষণ পর শিমুর ফোন দেখা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হলে ফরহাদ প্রথমে থামানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে নোবেল উত্তেজিত হয়ে স্ত্রীকে শেষ করে দেওয়ার কথা বলেন। এতে সহায়তা চাইলে ফরহাদও সাড়া দেন। তাৎক্ষণিকভাবে দুজন মিলে শিমুকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।

পরে ফরহাদ ও নোবেল পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা এনে শিমুর লাশ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর লাশ নিয়ে বেরিয়ে যান।

প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে লাশ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন। সন্ধ্যায় আবার তারা লাশ গুম করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জের দিকে যান। আনুমানিক রাত সাড়ে ৯ টায় মডেল থানার হযরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর লাশটি ফেলে চলে যান তারা।

১৭ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ থেকে শিমুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের পর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে গ্রেফতার করা হন শিমুর স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল (৪৮) ও তার বাল্যবন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদকে (৪৭)।

পুলিশ জানায়, লাশ গুম করতে দুটো বস্তা যে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই সুতারই হুবহু এক বান্ডিল শিমুর স্বামী নোবেলের গাড়িতে পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে সন্দেহ হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে আটক করে পুলিশ। পুলিশি হেফাজতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।

অথচ ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শিমুকে না পাওয়ার কথা উঠলে স্বামী নোবেল দাবি করেন, তার স্ত্রী সকালে বাসা থেকে বের হন, এরপর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিন রাতেই নোবেল কলাবাগান থানায় স্ত্রীর সন্ধান চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস ছালাম জানান, নোবেল ও ফরহাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার পরবর্তী তদন্ত চলছে।

সূত্র : বিডি প্রতিদিন