‘স্বাধীন দেশে অস্বচ্ছ নির্বাচন, কুয়াশাচ্ছন্ন গণতন্ত্র কাম্য নয়’

স্বাধীন দেশে অস্বচ্ছ নির্বাচন তথা কুয়াশাচ্ছন্ন গণতন্ত্র কখনো কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

আগারগাঁওস্থ ইটিআই ভবনে বুধবার সকালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ-২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘ভোট’দুই অক্ষরের একটি ছোট শব্দ। ছোট শব্দ হলেও এর ব্যপ্তি অত্যন্ত বিস্তৃত ও ব্যাপক। ভোটের সঙ্গে আরও দুটি শব্দ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি হচ্ছে নির্বাচন, অন্যটি হচ্ছে গণতন্ত্র। যদি আরও একটু বিশদভাবে ‘ভোট’শব্দটিকে বিশ্লেষণ করি, তাহলে অনিবার্যভাবে যে শব্দটি আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হয়, সেটি হচ্ছে স্বাধীনতা। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও নির্বাচন এই তিনটি চার অক্ষরের শব্দ ‘ভোট’-এর পটভূমি রচনা করেছে।

আমার মতে, ভোট কেবল ব্যাপক পরিসরের বিশাল ব্যপ্তির শব্দ নয়, এটি জনগণের রক্ষাকবচ। ভোটের মাধ্যমে জনগণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অংশগ্রহণ করে থাকে। তা জাতীয় পর্যায়ে বা স্থানীয় পর্যায়ের উভয় স্তরেই হতে পারে।

তিনি বলেন, ভোট হচ্ছে স্বাধীন দেশে জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রতীক একটি পবিত্র আমানত। ভোটের মাধ্যমেই ভোটাররা তাদের প্রতিনিধি বেছে নেয়ার সুযোগ পান এবং এতে জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটে, আমরা যাকে বলি নির্বাচন। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র অবলম্বন। যারা গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, তারা ভোটের উৎসবকে কলুষিত করতে চায়, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। আমরা যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও আইনানুগ নির্বাচনের কথা বলি, ভোটের পবিত্রতা বিনষ্ট করে তা সম্ভব নয়। ভোট সুষ্ঠু না হলে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের কোনো ঔজ্জ্বল্য থাকে না। স্বাধীন দেশে অস্বচ্ছ নির্বাচন তথা কুয়াশাচ্ছন্ন গণতন্ত্র কখনো কাম্য নয়।

তিনি আরো বলেন, এই বছর পয়লা মার্চ প্রথম বারের মতো আমরা জাতীয় ভোটার দিবস পালন করেছি। এর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘ভোটার হব, ভোট দেব’। কথাটা খুব সাদামাটা মনে হলেও এর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। আঠারো বছর হলেই একজন নাগরিক ভোটার হওয়ার উপযুক্ততা অর্জন করেন। কিন্তু ‘ভোট দেব’ কথাটার সঙ্গে রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার সম্পর্ক রয়েছে। সামান্য ভোট দেয়ার জন্যই তো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের অসামান্য আয়োজন। একজন ভোটার নিবিঘ্নে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরবেন, এইটুকু চাওয়া অনেক সময় স্বাভাবিকভাবে পূরণ করা সম্ভব হয় না। ভোট প্রদানের নেতিবাচক ঘটনাক্রম অনেক সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদের শিরোনাম পর্যন্ত হয়।

এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোট সুষ্ঠু ও শুদ্ধ হওয়ার পূর্বশর্ত হলো শুদ্ধ ভোটার তালিকা। ভুয়া ভোটারদের কাগুজে উপস্থিতি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রহসনে পরিণত করে। এ ছাড়া ভোটার তালিকায় মৃত ও স্থানান্তরিত ভোটারদের উপস্থিতি সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। এ জন্যই নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছে।

তিনি বলেন, আগামী ২৩ এপ্রিল দেশব্যাপী যে ভোটার তালিকা নিবন্ধনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষত নতুন ভোটারদের জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম। একজন নব্য ভোটার কেবল যে তালিকায় নিবন্ধিত হয়ে নির্বাচনে ভোটদানের যোগ্যতা অর্জন করেন তা নয়, ভোটার হওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি পরিপূর্ণ নাগরিকত্বে অভিষিক্ত হন। প্রতিটি নাগরিকের জন্য ভোট প্রদানের যোগ্যতা অর্জন ব্যক্তি জীবনের একটি মাইলফলক।

প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে দুটি গুণের সমাহার অপরিহার্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি নিষ্ঠা ও অন্যটি সততা। এই দুটি গুণ না থাকলে ভোটার তালিকা যথাযথ হওয়া সম্ভব নয়। যদি নিষ্ঠার সঙ্গে তালিকা প্রণয়ন না করা হয়, তাহলে ভোটার তালিকা তৈরির উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। আর যদি সততার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন না করা হয়, তাহলে নির্বাচনই বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে পারে। সুতরাং নিজেদের বিবেকবোধের কাছে দায়ী থেকে ভোটার তালিকা প্রণয়নের দায়িত্ব পালনে আপনাদের সদা সর্তক থাকতে হবে, যাতে কোনো প্রকার বিচ্যুতি না ঘটে।

যারা ভোটার তালিকা তৈরির প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন, তাদেরকে মূলত সামগ্রিক প্রশিক্ষণের বিষয়গুলি আত্মস্থ করতে হবে। নিজেরা যথার্থ প্রশিক্ষিত না হলে অন্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান সঠিক হবে না। প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে একজন কর্মকর্তা দুটি বিষয় অর্জন করেন। প্রথমত, দক্ষতা এবং দ্বিতীয়ত, আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস না থাকলে নিজের দায়িত্ব পালনে আত্মতৃপ্তির অবকাশ থাকে না।
সঠিক ও স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরির মাধ্যমে আপনারা একটি জাতীয় দায়িত্ব পালন করবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এ সময় ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।