হজের ৩৫ শতাংশ কোটা ফেরত

পবিত্র হজ নিবন্ধনের সময়সীমা পাঁচ দফা বৃদ্ধির পরও প্রায় ৪৫ হাজার কোটা পূরণ হয়নি। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজ কোটা দেওয়া হয়েছিল। সময়সীমার শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৮২ হাজার ৯৬৬ জন হজযাত্রী।

তাদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন ৪ হাজার ২৬০ জন। আর বেসরকারিভাবে যেতে নিবন্ধন করেছেন ৭৮ হাজার ৭০৬ জন। ফলে কোটা ফাঁকা থাকল ৪৪ হাজার ২৩২টি। পরে গত বৃহস্পতিবার ৩৫ শতাংশ কোটা ফেরত পাঠানো হয়েছে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের কাছে।

মূলত: দুই গুনের বেশি বিমান ভাড়া আর প্যাকেজের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যের কারণে হজের কোটা পূরণ হয়নি। গত বছরও একই কারণে ৫ হাজারের বেশি কোটা ফেরত দিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। হজ এজেন্সিগুলো বলছে—প্যাকেজে বাড়ি ভাড়া, বিমান ভাড়া, সৌদি আরবে যাতায়াত খরচ মাত্রাতিরিক্ত ধার্য করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ট্যাক্সও অস্বাভাবিক।

নির্ধারিত এয়ারলাইনস ছাড়া হজযাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান, সাউদিয়া এয়ারলাইনস এবং নাস এয়ার ছাড়া অন্য কোনো উড়োজাহাজে হজে যাওয়া-আসা করার সুযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি চিহ্নিত সিন্ডিকেট হজযাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের জন্য থার্ড ক্যারিয়ারের সুযোগ বন্ধ করেছে।

সিন্ডিকেটমুক্ত হলে ৫ লাখ টাকার মধ্যে কোরবানিসহ হজ করা সম্ভব। এই মনোপলির বৈধতাও চ্যালেঞ্জ করে গত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হাইকোর্ট রুল জারি করলেও সংশ্লিষ্টরা গুরুত্ব দেয়নি।

হজ এজেন্সি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হজ প্যাকেজের অতি উচ্চমূল্যের কারণে হজ গমনেচ্ছুদের অনেকের বাজেটে কুলাচ্ছে না। বর্তমানে দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। নিত্যপণ্যের আকাশচুম্বী দাম। সংসার চালাতে সাধারণ মানুষের হিমশিম অবস্থা। এ ছাড়া শিক্ষা-চিকিত্সাসহ সব খাতে খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ।

হজের জন্য যারা অল্প অল্প করে দীর্ঘদিন টাকা জমিয়েছেন তাদেরও বাজেটে টানাটানি। ফলে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে মধ্যবিত্তরা এবার হজের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছেন। তাদের অনেকেই হজের পরিবর্তে অল্প টাকায় ওমরাহের দিকে ঝুঁকছেন। তবে দেশের সার্বিক অর্থনীতির চাকা সচল হলে ফের হজযাত্রীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।এদিকে চলতি বছরে হজে যেতে ইচ্ছুকদের নিবন্ধনের অবশিষ্ট টাকা জমা দেওয়ার সময় ৯ দিন এগিয়ে আনা হয়েছে। হজের টাকা ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি উভয় মাধ্যমের হজযাত্রীদের জন্য মিনায় তাঁবু গ্রহণ, মোয়াল্লেম গ্রহণ, বাড়ি বা হোটেল ভাড়া, পরিবহন চুক্তি সম্পন্ন করতে হবে। এ কারণে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধনকারী হজযাত্রীদের আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিবন্ধনের অবশিষ্ট টাকা জমা দিতে হবে।

এবারের হজ নিবন্ধন শুরু হয় গত ১৫ নভেম্বর, যা ১০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রত্যাশিত সাড়া না মেলায় সময় বাড়ানো হয় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে সেই সময় আরও দুই দফায় ১৮ জানুয়ারি এবং পরে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বিশেষ বিবেচনায় সময় দেওয়া হয় ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে হজের জন্য নিবন্ধনের সময় বারবার বাড়িয়েও কোটার এক তৃতীয়াংশ পূরণ করা যায়নি।

ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান জানান, পাঁচ দফা সময় বাড়িয়েও বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় ৪৪ হাজার ২৩২টি কোটা খালি রেখেই হজযাত্রী নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হয়েছে। পরে সরকারি-বেসরকারি নিবন্ধিত হজযাত্রীদের সংখ্যা জানিয়ে সৌদি সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যে কোটাগুলো পূরণ করা যায়নি, তা ফেরত পাঠানো হয়েছে।