হাহাকার চালের জন্য

‘বাজারে চাউলের অনেক দাম, বাজার থেকে চাউল কিনে খাওয়ার মত ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই ফজরের আযানের আগে পাঁচ কেজি চাউলের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে চাউলের দোকানের সামনে বসে থাকি। কখনও চাউল পাই, আবার কখনও পাইনা’- কথাগুলো বলছিলেন চাল নিতে আসা সাজেদা খাতুন (৩২)।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে ফজরের আযানের আগে ওএমএসসের চাল নিতে আসেন তিনি। শুধু সাজেদা খাতুন নয়, রাকি বেগম, পলি বেগম, জামাল মিয়া, ফজলু মিয়াসহ শতাধিক অসহায় মানুষ মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে তাদের ছেলেমেয়েদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য সরকারি ওএমএসসের চালের দোকানের সামনে বসে থাকেন।

জলিলপুর গ্রাম থেকে আসা ফজলু মিয়া জানান, সরকার প্রতিদিন যে চাল দেয় তা কেউ পায় আর কেউ পায় না। ডিলারের দোকানে চাল কেনার জন্য কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায়। গরীব মানুষের সংখ্যা বেশি তাই চাল-আটার বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। প্রত্যেক ব্যক্তি এক সঙ্গে পাঁচ কেজি চাল বা আটা কিনতে পারেন। পাঁচ কেজি চালের দাম ১৫০ টাকা ও আটার দাম ৯০ টাকা।

লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের বাসিন্দা জামাল মিয়া জানান, ‘বাজার থাকি চাউল কেনার সামর্থ্য নাই। বাজারের এক কেজি মোটা চাউলের দাম ৪৫ টাকা। এতো টাকা দিয়া চাউল কিনমু ক্যামনে। ইতার লায় সরকারি চাউলের লাগি তিন মাইল পথ পারি দিয়া টাউনে আই’।

করিম মিয়া বলেন, কোনোসময় চালের এতো দাম ছিল না। এবার ৩০ টাকার চাল ৪৫ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এবার আয়-রোজগার কম কিন্তু চালের দাম বেশি। চাল কিনলে বাজার করার পয়সা থাকে না।

শামসুজামান জানান, সারাদিন রিকশা চালিয়ে ৩০০-৪০০ টাকা রোজগার করে রিকশার টাকা জমা দেয়ার পর হাতে দুই-আড়াইশো টাকা থাকে। এ টাকা দিয়ে বাজার থেকে চাল কিনলে অন্যকিছু আর কেনা যায় না। তাই ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে চাল কিনি। অনেক দিন কিনতে পারি আবার অনেকদিন পারি না। তখন খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হয়।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্রে জানা যায়, ৪ জানুয়ারি থেকে সুনামগঞ্জ জেলা শহরের পাঁচজন ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন এক হাজার মানুষের জন্য সরকারিভাবে ওএমএস এর চাল আটা বিক্রি করা হচ্ছে। পৌর এলাকার নুতনপাড়া, হাছননগর, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, তেঘরিয়াসহ পাঁচটি পয়েন্টে ডিলারগণ চাল বিক্রি করছেন। প্রত্যেক ডিলার প্রতিদিন এক টন করে চাল-আটা বিক্রি করতে পারেন। জেলা শহর ছাড়া অন্য কোনো উপজেলায় ওএমএস এর চাল বিক্রি হচ্ছে না।

চালের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয়ভাবে চাল কিনতে পারছেন না তারা। দিনাজপুর থেকে মোটা বালাম চাল এনে বিক্রি করছেন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চালের দাম অনেক বেশি আবার অন্যদিকে আড়তগুলোতে সে পরিমাণ চাল মজুদ নেই। তাই চালের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।

আমদানী করা চাল এখনো সুনামগঞ্জের বাজারগুলোতে আসেনি। ফলে চালের দাম আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নুতনপাড়া এলাকার ওএসএস ডিলার রতন লাল ধর বলেন, গেল ১৫ দিনে চালের চাহিদা দ্বিগুন হয়েছে। প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চাল নিতে আসেন অসংখ্য গরীব অসহায় মানুষ। সবাইকে চাল বা আটা দেয়া যায় না। এক টন চাল বা এক টন আটা নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। তাই বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. নকিব সাদ সাইফুল ইসলাম বলেন, চালের বরাদ্দ স্থানীয়ভাবে বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছি। বাড়ানো হলে ডিলারদের কাছে দেয়া চালের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হবে।