১৬ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির দেড় ঘণ্টা বৈঠক

ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় গুলশানে রোববার বিকাল ৪টা থেকে ৫টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা চলে এ বৈঠক।

এতে কানাডা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, স্পেন, জাপান, রাশিয়াসহ মোট ১৬টি দেশের কূটনীতিক অংশ নেন।

এ ছাড়া ইউএনডিপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারাও এতে উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, তাবিথ আউয়াল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে কূটনীতিকদের সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত করেছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি ও সুচিকিৎসা, সিটি নির্বাচন, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে গণতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, অর্থনীতি এবং দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের অবহিত করে বিএনপি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকের শুরুতেই সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কূটনীতিকদের একটি লিখিত কপি দেয়া হয়। যাতে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের বিলম্ব, চিকিৎসায় অবহেলা, খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সরকারি দলের প্রভাব বিস্তার, নেতাকর্মীদের গ্রেফতারসহ সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হয়।

খুলনা সিটি নির্বাচনে সরকার নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করছে বলে তাদের জানানো হয়। এভাবে চললে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন বিএনপি নেতারা। বৈঠকে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে কূটনীতিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় দেয়া সাজা ও হাইকোর্ট প্রদত্ত জামিনসহ কারাগারে তার অসুস্থতা এবং তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দেয়া, নিকটাত্মীয়-স্বজনদের সাক্ষাৎ করতে না দেয়ার বিষয়গুলো কূটনীতিকদের অবহিত করা হয়।

১৫ মে অনুষ্ঠেয় খুলনা সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনসহ ক্ষমতাসীন দলের তাণ্ডবের কথা তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরে খুলনায় বিএনপি ও ২০ দলের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতারের বিষয়টিও কূটনীতিদের অবহিত করা হয়।

নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশিসহ ভোটকেন্দ্রে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের দেয়া প্রাণনাশের হুমকির কথাও তুলে ধরা হয়। নারী এজেন্টদের বাড়িতে নারী পুলিশ পাঠিয়ে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়।

এছাড়া ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার কীভাবে নীলনকশা করছে’- বিএনপির পক্ষ থেকে তার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। কিন্ত আমাদের চেয়ারপারসন কারাগারে।

এছাড়া নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েও ক্ষমতাসীনরা কোনো আলোচনায় বসতে চাচ্ছে না। সরকার ন্যূনতম গণতান্ত্রিক স্পেস দিচ্ছে না। বিরোধী মতকে নানাভাবে দমন করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব কিনা তা আপনারাই ভেবে দেখুন।

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপি কীভাবে চলছে- উপস্থিত এক কূটনীতিকের এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করবেন।

সেই অনুযায়ী তারেক রহমান বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।

এদিকে বৈঠক শেষে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সংক্ষিপ্ত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘন করে সরকার খুলনা মহানগরীতে সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করছে।

এ ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রোববার আরও একটি রিট করা হয়েছে। সোমবার এ ব্যাপারে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।