২০২০ সালে ক্রীড়াঙ্গন হারিয়েছে যেসব কিংবদন্তিকে

করোনাভাইরাসে জর্জরিত একটি বছর ২০২০। পুরো বছরটা কেটেছে অজানা ভাইরাসের আতঙ্কে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণে টালমাটাল পুরো বিশ্ব। প্রাণ হারিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন হারিয়েছে তার চিরচেনা রং। স্থগিত হয়েছে বড় বড় ক্রীড়া আসর। না ফেরার দেশে চলে গেছেন অনেক কিংবদন্তিও। চলতি বছর হারানো ক্রীড়াঙ্গনের কিংবদন্তিদের মাঝে রয়েছেন বাস্কেটবল তারকা কোবি ব্রায়েন্ট, ফুটবল ঈশ্বর দিয়েগো ম্যারাডোনা, ইতালির পাওলো রসি, অস্ট্রেলিয়ার ডিন জোন্সসহ আরও অনেকে।

কোবি ব্রায়ান্ট:
বছরের শুরুতেই এক মর্মান্তিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যান এই কিংবদন্তি বাস্কেটবল খেলোয়াড়। গত ২৬ জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন ৪১ বছর বয়সী কোবি ব্রায়ান্ট ও তার ১৩ বছরের মেয়ে জিজি ব্রায়ান্ট। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে।

বাস্কেটবলে তিনি পাঁচবার জিতেছেন এনবিও চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ১৮ বার ছিলেন অলস্টার দলের সদস্য। এ ছাড়া দেশের হয়ে ২০০৮ ও ২০১২ সালের অলিম্পিকে স্বর্ণপদকও জিতেছেন এই কিংবদন্তি বাস্কেটবল খেলোয়াড়।

চেতন চৌহান:
চলতি বছরের ১৬ আগস্ট ৭৩ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান ভারতের সাবেক ক্রিকেটার চেতন চৌহান। জুলাইয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে তার। ভেন্টিলেটর সাপোর্ট সত্ত্বেও বাঁচানো যায়নি তাকে।
চেতন চৌহান ভারতের হয়ে খেলেছেন ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত। সব মিলিয়ে ৪০ টেস্ট আর ৭টি ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। ১৯৬৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় তার। টেস্ট ক্রিকেটে সুনীল গাভাস্কারের সঙ্গে সফল জুটি গড়েছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সালে তিনি রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এ ছাড়া ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।

ডিন জোন্স:
বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনকে হতবিহবল করে গত সেপ্টেম্বরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ধারা বিবরণী দিতে গিয়ে মুম্বাইয়ের হোটেলে হঠাৎ স্ট্রোক করেন অস্ট্রেলিয়ান ধারাভাষ্যকার ডিন জোন্স। সেখানেই জীবনের ইতি টানেন এই কিংবদন্তি। ২৪ সেপ্টেম্বর মারা যান ডিন জোনস। মুম্বাইয়ে মৃত্যুর সময় ডিন জোন্সের বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই তারকা ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত মাঠ মাতিয়েছেন। অজিদের হয়ে ৫২ টেস্ট আর ১৬৪টি ওয়ানডে খেলেছেন। টেস্টে তার সংগ্রহ ৩ হাজার ৬৩১ রান। এ ছাড়া ওয়ানডেতে ৬ হাজারেরও বেশি রান করেছেন তিনি। ২০১৯ সালে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের ‘হল অব ফেমে’ স্থান পেয়েছিলেন ডিন জোন্স। ক্রিকেট ছাড়ার পর ধারাভাষ্যের সঙ্গে জড়িত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আইপিএলে ধারাভাষ্য দিয়েছেন। জোন্স ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন।

দিয়েগো ম্যারাডোনা:
২৫ নভেম্বর, ২০২০। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন হয়তো কোনোদিনও ভুলবে না দিনটাকে। এদিন পুরো বিশ্বকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে পরপারে চলে যান ফুটবল ঈশ্বরখ্যাত কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা। ৬০ বছর বয়সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ফুটবলার। দীর্ঘ অসুস্থতা, এরপর অস্ত্রোপচার। হাসপাতাল ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান করেন ম্যারাডোনা। কিন্তু হঠাৎ মারা যান এই তারকা। একসময়ের মাঠের তারা থেকে হয়ে গেলেন অসীম আকাশের তারা। তার মৃত্যুশোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ভক্ত-সমর্থকরা।
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। ১৯৯০ বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি। তবে জার্মানির কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত থাকতে হয় তাকে।

পাওলো রসি:
২০২০ সাল যেন একের পর এক নক্ষত্র হারানোর বছর! ম্যারাডোনা চলে যাওয়ার শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই চলে যান আরেক কিংবদন্তি পাওলো রসি। ৯ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় এই ইতালিয়ান ফুটবল কিংবদন্তির। ৬৪ বছর বয়সে মারা যান ১৯৮২ সালে ইতালিকে বিশ্বকাপ জেতানো নায়ক রসি।

রবিন জ্যাকম্যান:
২৫ ডিসেম্বর, ২০২০। বড়দিন উৎসব। এ উৎসবের মাঝেই পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেওয়ার খবর আসে সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার রবিন জ্যাকম্যানের। ৭৫ বছর বয়সে মারা যান সাবেক এই ক্রিকেটার।
ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা জ্যাকম্যান জন্ম নিয়েছিলেন ভারতের শিমলায়। ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলেছেন মাত্র ৪টি। এ ছাড়া ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন ১৫টি। ক্রিকেট থেকে অবসরের পর দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যান তিনি। তারপর থেকেই ধারাভাষ্যকার হিসেবে নাম লেখান।

লুক হারপার:
চলে যাওয়ার তালিকায় সর্বশেষ নাম যোগ হলো রেসলার লুক হারপারের। ২৭ ডিসেম্বর মারা গেলেন দর্শকপ্রিয় রেসলিং তারকা লুক হারপার। ৪১ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমান এই জনপ্রিয় আমেরিকান রেসলার।