৫০ বছর পর সেই ভৌতিক রেলস্টেশনের রহস্য উন্মোচন!

অবশেষে দীর্ঘ ৫০ বছর পর উন্মোচন হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার সেই ভৌতিক রেলস্টেশনের রহস্য। রহস্যে ঘেরা সেই ছোট্ট রেল স্টেশনে একটি শীতের রাত কাটিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে এর সমাধান পেয়েছেন কয়েকজন লোক।ওই স্টেশনে রাত কাটানোর সময় দেখতে পান, কোনো ভূত-প্রেত নয় বরং স্থানীয় কয়েকজন লোক তাদেরকে ভয় পাইয়ে দিতে চেয়েছিল।

ওই স্টেশনটির নাম বেগুনকোড়ো। যা অযোধ্যা পর্বতমালার কাছে অবস্থিত যা পুরুলিয়া শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে। ১৯৬৭ সাল থেকে ওই স্টেশনটিকে ভৌতিক স্টেশন বলে আখ্যায়িত করা হতে থাকে। কারণ সে বছরই এর স্টেশন মাস্টার মধ্যরাতের পর সাদা শাড়ি পরিহিত একজন নারীকে রেল লাইনের ওপর দিয়ে হাঁটতে দেখার পর মারা গিয়েছিলেন।

এরপর থেকে যাত্রীরা স্টেশনটি এড়িয়ে চলতে শুরু করেন। আর রেলওয়ে রেকর্ডেও স্টেশনটিকে ভৌতিক স্টেশন বলে আখ্যায়িত করা হয়।যাত্রীরা এড়িয়ে চলার কারণে বেগুনকোড়োর স্টেশনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভারতে এমন ১০টি রেল স্টেশন আছে যেগুলো ভৌতিক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

মমতা ব্যানার্জি রেল মন্ত্রী হওযার পর ২০০৯ সালে ৪২ বছর পর স্টেশনটি খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও যাত্রীরা ভূতের ভয়ে শুধু বিকাল ৫টা পর্যন্ত রেল স্টেশনটি ব্যবহার করতে থাকেন। অবশেষে পশ্চিম বাংলা বিজ্ঞান মঞ্চের ৯ সদস্যের একটি যুক্তিবাদী দল গত বৃহস্পতিবার রাতে এর রহস্যের উদঘাটন করেন। তারা টর্চ লাইট, ডিজিটাল কম্পাস ও পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে রেল স্টেশনটিতে অবস্থান নিয়ে এর ভৌতিক গুজবের অবসান করেন।

ওই যুক্তিবাদী দলটির নেতৃত্বে থাকা নয়ন মুখার্জি বলেন, ‘আমরা পুরুলিয়ার বেগুনকোড়োর স্টেশনে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত অবস্থান করেছি। কিন্তু সেখানো কোনো ভৌতিক তৎপরতা দেখতে পাইনি। ’

তিনি বলেন, ‘কথিত সেই নারী ভূতকে আমরা দেখতে পাইনি। যিনি বহু বছর আগে ওই স্টেশনে আত্মহত্যা করেছিলেন বলে কথিত আছে। এছাড়া ওই নারীর ভূতকে দেখে মারা যাওয়া সেই স্টেশন মাস্টারের আত্মার দেখাও পাইনি আমরা। আমরা শুধু পাশের একটি কুয়ার মধ্যে একটি সাপকে দেখতে পেয়েছি। ’

‘আর রাত দুটার দিকে স্টেশন ভবনের পেছনের ঝোপ থেকে অদ্ভুত আওয়াজ শুনতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে টর্চের আলো ফেলে চার-পাঁচজন লোককে দেখতে পেয়ে তাড়া শুরু করলে তারা পালিয়ে যায়। ’

তিনি বলেন, আসলে কিছু লোক স্টেশনটি সম্পর্কে গুজব ছড়িয়ে দিয়ে সেখানে ‘ভূত পর্যটন’ উৎসাহিত করতে চেয়েছিল। এরপর রাতে সেখানে কেউ থাকতে আসলে তাদেরকে ভয় দেখিয়ে তাদের মালামাল চুরি করত।

নয়ন মুখার্জি বলেন, স্টেশনে স্থাপন করা কম্পাস বা ক্যামেরায় কোনো ধরনের অস্বাভাবিক তৎপরতার চিত্র ধরা পড়েনি। পুরুলিয়া জেলার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, নয়ন মুখার্জির নেতৃত্বাধীন যুক্তিবাদী দলটি পুলিশি নিরাপত্তা চাইলে তাদেরকে তা দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, পুলিশ এবং প্রশাসন জানতো যে বেগুনকোড়োর স্টেশন স্থানীয়দের মাঝে একটি ভৌতিক স্টেশন হিসেবে পরিচিত ছিল। সম্প্রতি পুলিশ সেখানে রাতে টহল শুরু করেছিল। এছাড়া লোকজনের মধ্যে সচেতনতা তৈরির চেষ্টাও করা হচ্ছিল।