৬ লাখ কোটির বিশাল বাজেট : আসবে কোথা থেকে, খরচ হবে কোথায়?

জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন তিনি।

আসন্ন বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব প্রাপ্তি ও বৈদেশিক অনুদান থেকে সরকার ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে। ফলে এবার বাজেটে অনুদানসহ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ। অনুদান বাদ দিলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

যেভাবে বাজেট অর্থায়নের যোগান দিবেন সরকার: আসন্ন বাজেটে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর, কর ব্যতীত প্রাপ্তি, অভ্যন্তরীণ ঋণ, বৈদেশিক ঋণ ও বৈদেশিক অনুদান থেকে অর্থায়নের যোগান দিবেন। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর আদায় ধরা হয়েছে ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর ২ দশমিক ৬ শতাংশ, কর ব্যতীত প্রাপ্তি ৭ দশমিক ১ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ ঋণ ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ, বৈদেশিক ঋণ ১৬ দশমিক ২ শতাংশ ও বৈদেশিক অনুদান থেকে ০ দশমিক ৬ শতাংশ আদায় করা হবে।

প্রস্তাবনা অনুযায়ি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত করসমূহের মধ্যে- আয়, মুনাফা ও মূলধনের উপর কর, মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক, আমদানি শুল্ক, রপ্তানি শূল্ক, আবগারি শুল্ক ও অন্যান্য কর থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আয়, মুনাফা ও মূলধনের উপর কর আদায় হবে ১ লাখ ৪ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা, মূল্য সংযোজন কর আদায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক আদায় ৫৪ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা, আমদানি শুল্ক ৩৭ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্প ৫৬ হাজার কোটি টাকা, আবগরি শুল্ক ৩ হাজার ৮৪২৫ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর বাবদ আদায় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা।

রাজস্ব রোর্ড বহির্ভূত করসমূহের মধ্যে- মাদক শুল্ক, যানবহন কর, ভূমি রাজস্ব, স্ট্যাম্প বিক্রয় (নন-জুডিশিয়াল) এবং সারচার্জ/১ থেকে মোট ১৬ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে মাদক শুল্ক থেকে ১৩৮ কোটি টাকা আদায়, যানবহন কর থেকে ৮ শ কোটি টাকা, ভূমি রাজস্ব থেকে ১ হাজার ৮শ ৮২ কোটি টাকা, স্ট্যাম্প বিক্রয় (নন-জুডিশিয়াল) থেকে ১২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা এবং সারচার্জ/১ থেকে ৫৬৩ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে।

এছাড়া কর বহির্ভূত প্রাপ্তির মধ্যে- লভ্যাংশ ও মুনাফা, সুদ, প্রশাসনিক ফি, জরিমানা, দণ্ড ও বাজেয়াপ্তকরণ, সেবা বাবদ প্রাপ্তি, ভাড়া ও ইজারা, টোল, অবাণিজ্যিক বিক্রয়, কর ব্যতীত অন্যান্য রাজস্ব ও প্রাপ্তি এবং মূলধন রাজস্ব থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৩ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে লভ্যাংশ ও মুনাফা থেকে ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, সুদ থেকে ১৫ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা, প্রশাসনিক ফি থেকে ৭ হাজার ২০৮ কোটি টাকা, জরিমানা, দণ্ড ও বাজেয়াপ্তকরণ থেকে ৪৬৩ কোটি টাকা, সেবা বাবদ প্রাপ্তি ৫ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা, ভাড়া ও ইজারা ৪৫৯ কোটি টাকা, টোল থেকে ১ হাজার ৪ কোটি টাকা, অবাণিজ্যিক বিক্রয় ৩ হাজার ৩২২ কোটি টাকা, কর ব্যতীত অন্যান্য রাজস্ব ও প্রাপ্তি থেকে ৭ হাজার ১১২ কোটি টাকা এবং মূলধন রাজস্ব থেকে ৩২৭ কোটি টাকা আদায় করা হবে।

এছাড়া সরকার বাকি অর্থায়নের যোগান দেবে অভ্যন্তরীণ ঋণ, বৈদেশিক ঋণ এবং বৈদেশিক অনুদান থেকে।

যে খাতে ব্যয় হবে

প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক বরাদ্দ খাতে ব্যয় হবে ১ লাখ ৭০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ২৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। মানবসম্পদ খাতে (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাত) বরাদ্দের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। ভৌত অবকাঠামো খাতে ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা বাজেটের ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

এর মধ্যে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে খরচ হবে ৭৪ হাজার ১০২ কোটি টাকা, যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ৬৯ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।

সাধারণ সেবা খাতে খরচের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব, বিভিন্ন শিল্পে ভতুর্কি, রাষ্ট্রায়ত্ত, বাণিজ্যিক ও আর্থিক খাতে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। সুদ পরিশোধ বাবদ ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা ও নিট ঋণদান ৫ হাজার ১০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য,২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পান লোটাস কামাল। ৫ বছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় আর জাতীয় উন্নয়নে রাখেন প্রত্যক্ষ অবদান। এরপর বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদে এসে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্থলাভিষিক্ত হন ২০১৯ সালে।