আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে ‘ঐক্যে’ জটিলতা আরো বাড়বে
বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট’ আত্মপ্রকাশ করলেও সঙ্গে নেই সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা৷ যদিও শুরুতে ঐক্য প্রক্রিয়ায় তারা একসঙ্গে কাজ করেছেন৷
বিশ্লেষকরা বলছেন আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে এই ঐক্যে আরো জটিলতা বাড়বে৷ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে ততই জটিলতার নানা রূপ প্রকাশ পাবে৷ আারো অনেক কিছু দেখার বাকি আছে৷
বিকল্প ধারা শনিবারই ‘জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট’ আত্মপ্রকাশের দিন সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, ‘‘বিএনপিকে অবশ্যই জামাতের সঙ্গ ছাড়তে হবে৷ তা না হলে ঐক্য হবেনা৷”
পাশাপাশি, ক্ষমতার ভারসাম্য চায় দলটি৷ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ভারসাম্যের মানে হল আসন ভাগাভাগি৷ বিকল্পধারা যে পরিমান আসন চায় তা গ্রহণযোগ্য হয়নি বিএনপিসহ অন্যান্য শরীক দল ও জোটের কাছে৷ ফলে শনিবার দিনভর আলোচনা ও নাটকের পর বিকল্প ধারাকে বাইরে রেখেই ‘জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে৷ আর বিকল্প ধারাও সন্ধ্যায় প্রায় একই সময়ে সংবাদ সম্মেলন করে ‘জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট’-এ না থাকার ঘোষণা দেয়৷ আর এর পরপরই মান্না-মাহীর একটি ফোনালাপ ভাইরাল হয়৷ যেখানে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে ও বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বলেন, ‘‘ঐক্যের নামে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে৷”
প্রসঙ্গত, ‘জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট’-এ এখন বিএনপি, গণফোরাম, জাসদ (রব), নাগরিক ঐক্য যুক্ত হল৷ এর আগে অবশ্য ২২ সেপ্টেম্বর ড. কামাল হোসেনের ডাকা ঐক্যের সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন ডা.বদরুদ্দোজা চৌধুরী৷ সেখানে বিএনপি মহাসচিবসহ আরো অনেক শীর্ষ নেতা যোগ দেন৷ তখন মনে করা হয়েছিল ঐক্যে বিকল্প ধারা ধাকবে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হলনা৷
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েরর সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিকল্প ধারা শুরু থেকেই ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে তেমন সিরিয়াস ছিলনা৷ তাদের নানা আচরণ এবং বক্তব্যে তা স্পষ্ট ছিল৷ তারপরও মনে করা হয়েছিল তারা থাকবে৷ শেষ পর্যন্ত না থাকায় জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট কিছুটাতো দূর্বল হয়েছেই৷ আমার ধারণা এই জোট নির্বাচনে বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলবে না৷ কারণ এই জোটে বিএনপি বাদে আর কারো তেমন কোনো আসন নেই৷ অনেকের নির্বাচনী এলাকাও নেই৷ আর বিকল্প ধারা জোটে থাকলে এরচেয়ে নতুন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি যে হত তাও নয়৷”
তিনি বলেন, ‘‘এতে বরং সরকার লাভবান হয়েছে৷ এই জোটের মাধ্যমে এখন এটা স্পষ্ট যে বিএনপি ড. কামাল হেসেনের নেতৃত্বে খালেদা জিয়াকে ছাড়াই নির্বাচনে যাবে৷ আমার মনে হচ্ছে আগামীতে ড. কামাল হোসেনই জোটের মাধ্যমে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হবেন৷ বিএনপি’র ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ৷ এতে করে যেটা হবে বর্তমান সরকার নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে পারবে৷ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে সরকারের যে সমালোচনা আছে সেই ধরনের সমালোচনা আর হবে না৷”
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে এই জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে কিছুটা সংকট হতে পারে৷ তবে তা জটিল আকার ধারণ করবে বলে মনে হয়না৷ কারণ বিএনপি ছাড়া আর যারা জোটে আছেন তারাও অনুধাবন করবেন তাদের অবস্থা৷ আমরা ভবিষ্যতে ড. কামাল, আ স ম রব, মান্না – এদের হয়তো সংসদে দেখব৷”
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনূ মজুমদার বলেন ‘‘এটা একটি নির্বাচনকেন্দ্রিক ঐক্য৷ পাল্টা ক্ষমতা দখলের লড়াই৷ এটা আদর্শিক কোনো ঐক্য নয়৷ ড. কামাল সুশাসন, দুর্নীতি প্রতিরোধসহ আরো যেসব কথা বলছেন তা কিন্তু তার শরিকদের নিয়ে সম্ভব নয়৷ কারণ ছোট বড় মিলিয়ে যেসব দল এখানে আছে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ৷ ফলে এই জোট তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না৷”
তিনি বলেন, ‘‘বিকল্প ধারা জোটে গেলনা৷ আমার মনে হয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে তত আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে সংকট দেখা দেবে৷ আমরা এখন জোটের যে চেহারা দেখছি তা নাও থাকতে পারে৷”
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘বিকল্প ধারা জোটে না থাকার একটি কারণ হয়তো আসন ভাগাভাগি৷ এছাড়া ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্বও হতে পারে৷ বি চৌধুরীকে অত্যন্ত নির্মমভাবে বিএনপি ছাড়াতে হয়েছিল৷ রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়তে হয়েছিল৷”
তিনি আরো বলেন, ‘‘বি চৌধুরী জামাত প্রশ্নে যে অবস্থান নিয়েছেন তা ভেবে দেখার মত৷ যে অবস্থান ড. কামালের কাছ থেকে আশা করা হয়েছে সেই অবস্থান নিয়েছেন বি চৌধুরী৷ আমার মনে হয় এতে বি চৌধুরীর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে৷”
তিনি মনে করেন, ‘‘আগামী কয়েক সপ্তাহে রাজনীতিতে আরো নতুন কিছু ঘটবে, নতুন কিছু দেখা যেতে পারে৷”
-ডয়চে ভেলে
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন